শোলাকিয়ায় ১৯৮তম ঈদ জামাতে থাকছে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়


March 2025/Sholakia.jpg

এবারও দেশের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। এবার শোলাকিয়ায় ১৯৮তম ঈদুল ফিতরের বড় জামাতে নামাজ পড়াবেন ঈদগাহের নতুন ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। জামাতকে ঘিরে থাকছে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়।

কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীর ঘেষে অবস্থিত শোলাকিয়া ঈদগাহে যুগ যুগ ধরে ঈদের নামাজে মুসল্লিদের ঢল নামে। এবারও এই মাঠে ঈদের নামাজ পড়বেন লাখো মানুষ। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে ঈদগাহ মাঠের লাইন টানা, রঙ করা, আজুখানা মেরামত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ বেশিরভাগ কাজ। এখন চলছে সাজসজ্জাসহ শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
 
প্রায় ২৫০ বছরের প্রাচীন শোলাকিয়া ঈদগাহের আয়তন প্রায় ৬ একর। ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহে এক লাখ ২৫ হাজার বা ‘সোয়া লাখ’ মুসল্লি এক সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’, যা এখন শোলাকিয়া নামে পরিচিত। বড় জামাতে এক কাতারে দাঁড়িয়ে এই মাঠে নামাজ পড়লে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়, এমন বিশ্বাসে প্রতি বছর ঈদের জামাতে অংশ নেন, দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি। বংশ পরম্পরায় এখানে ঈদের নামাজ পড়ছেন অনেকে।
 
জানা যায়, শোলাকিয়ায় ঈমাম নিয়ে বিতর্ক থাকায় গত ১৫ বছরে অনেকে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যাননি। সেসময় মাঠের স্থায়ী ইমাম মুফতি আবুল খায়েল মোহাম্মদ সাইফুল্লাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের সভাপতি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে ইমাম নিয়োগ করায় অনেকে মাঠে নামাজ পড়া বন্ধ করে দেন। এবার দীর্ঘ ১৫ বছর পর শোলাকিয়া ঈদগাহের নতুন ইমাম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভায় মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহকে পুনরায় ইমাম নিয়োগ দেয়া হয়। প্রথম বারের মতো ঈদগাহের নামকরণ সাইনবোর্ড লাগানো হয়। তাই আয়োজকদের ধারণা, এবার শোলাকিয়ায় মুসল্লির সমাগত গত বছরের তুলনায় বেশি হবে।
 
এ পরিস্থিতিতে ঈদের জামাতকে ঘিরে নেয়া হয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে বিপুল সংখ্য পুলিশ, র‌্যাব ছাড়াও থাকছে ৫ প্লাটুন বিজিবি। মাঠে প্রবেশের আগে মুসল্লিদের চারটি নিরাপত্তা চৌকি পার হতে হবে। প্রতিটি প্রবেশ পথে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশির পর আর্চ ওয়ের ভেতর দিয়ে মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। সিসি ক্যামেরায় মনিটর করা হবে মাঠের ভেতর ও চারপাশ। ঈদগাহের চারপাশে ৬টি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। চারটি শক্তিশালী ড্রোন ক্যামেরা মনিটর করবে চারপাশ। প্রস্তুত থাকবে বোম ডিসপোজাল ইউনিট।
 
পুলিশ ও জেলা প্রশাসনসহ ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তারা দফায় দফায় মিটিং করে ও মাঠ পরিদর্শন করে প্রস্তুতি তদারকি করছেন। সবশেষ আজ শনিবার (২৯ মার্চ) জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র‌্যাবের ডিআইজিসহ প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা সাংবাদিকদের কাছে সবশেষ প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
 
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার হাছান চৌধুরী জানান, পোশাকি এক হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত তাকবে। এ ছাড়া সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা। ঈদের দিন সকালে পুরো মাঠ মেটাল ডিডেক্টর দিয়ে সুইপিং করে তারপর আর্চওয়ে পার হয়ে মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। ৬৮টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও ৪টি ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে পুরো মাঠ ও আশপাশের এলাকা নজরদারি করা হবে।
 
র‌্যাব ১৪’-এর ময়মনসিংহ ক্যাম্পের অধিনায়ক অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি নাইমুল হাসান কলেন, বিপুল সংখ্যক র‌্যাব সদস্য মাঠের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষা করবে। র‌্যাকের হাতে থাকবে স্নাইপার অস্ত্র। মুসল্লিরা যাতে শোলাকিয়ায় নামাজ পড়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন সেজন্য সব প্রস্তুতি র‌্যাবের রয়েছে।
 
শোলাকিয়া ইদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, ‘নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সব কিছু সাজানো হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য মুসল্লিদের টুপি ও জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।’
 
‘শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। এবার গত বছরের তুলনায় বেশি মুসল্লি সমাগম ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
 
এদিকে, দূরের মুসল্লিদের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করেছে রেলওয়ে। ঈদের দিন সকাল ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে এবং পৌনে ৬ টায় ভৈরব থেকে যাত্রা শুরু করে ট্রেন দুটি কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল ৮টায়। জামাত শেষে ট্রেন দুটি গন্তব্যে ছেড়ে যাবে দুপুর ১২টায়।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×