
শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর পরিবার আর কখনোই হাওরের পথে যাবে না এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে তারা, কারণ সেই স্বপ্নময় স্থান এখন তাদের কাছে বেদনার প্রতীক। ঘাতকের গুলিতে প্রাণ হারানো মুগ্ধর স্মৃতি তাদের প্রতিমুহূর্তে তাড়া করে। পরিবারের একমাত্র চাওয়া, যেন মুগ্ধসহ সব শহীদের জন্য ন্যায্য বিচার এবং প্রাপ্য সম্মান নিশ্চিত করা হয়।
মুগ্ধর বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত জানান, তারা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে ঘটনার ভিডিও ফুটেজসহ প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন। তবে বিচারপ্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিয়ে তারা চরমভাবে অসন্তুষ্ট।
২০২৪ সালের ১৮ জুলাই, উত্তরা আজমপুর এলাকায় সরকারবিরোধী গণ-আন্দোলনের সময় সহযোদ্ধাদের পানি এনে দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে পাস করা ও পরবর্তীতে বিইউপিতে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত মেধাবী ছাত্র মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। ঘটনার পর সেই নির্মম হত্যার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং জনসাধারণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
মুগ্ধ ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম ফাইবারে সফলভাবে কাজ করছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে ফ্রিল্যান্সারদের মাঝে শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
ভ্রমণপ্রিয় মুগ্ধ ১৭ জুলাই পরিবারকে কক্সবাজারের বাসে তুলে দিয়ে নিজে টাঙ্গুয়ার হাওরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ২০ জুলাই তার যাত্রার কথা থাকলেও সেই স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যায়।
ভাই দীপ্ত বলেন, “হাওরের সব প্ল্যান ও নিজেই করেছিল। ১১ জন বন্ধুর সঙ্গে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আর যাওয়া হলো না। এখন মনে হয়, আমাদের পরিবারের আর কেউ কখনো হাওরে যাবেও না।”
জুলাইয়ের এই শহীদ হত্যার বিচার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে মুগ্ধর ভাই বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তথ্য-প্রমাণ জমা দিয়েছি, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখিনি। আমরা কাউকে দোষী বানাইনি, শুধু বিচার চেয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “তিন ভাই একসঙ্গে আর কোনোদিন কোথাও যাওয়া হবে না, এটাই এখন সবচেয়ে বড় কষ্ট। আমরা চাই শুধু একটি জিনিস -বিচার। প্রত্যেক শহীদ পরিবার যেন তাদের প্রাপ্য বিচার এবং সম্মান পায়, সেটাই আমাদের চাওয়া।”