
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ শনিবার বিকেলে কুমিল্লা টাউনহল মাঠে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস লুটপাট ও সন্ত্রাসের ইতিহাস।
তিনি জানান, ২০২৪ সালের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ১৪শ’ মানুষকে হত্যা করেছে, ২০ হাজারের বেশি মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এত রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে শেখ হাসিনার পতনের পর আমরা আজ এখানে আসতে পেরেছি। আমাদের রক্তাক্ত ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না।
ধর্মের ব্যবহার ও রাজনীতির প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন বলেন, ধর্ম নিয়ে রাজনৈতিক ব্যবসা চলবে না। ইসলাম কোনো রাজনৈতিক বাক্স নয়। ইসলামের নামে যারা বিভাজন সৃষ্টি করতে চায়, তাদের রাজনৈতিকভাবে ভোটের মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি ১৯৭১-এর চেতনার ব্যবসা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন, চেতনার ব্যবসা করতে করতে শেখ হাসিনা দিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছেন। চেতনার ব্যবসা করতে করতে তার মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে। সুতরাং ৭১-এর চেতনার ব্যবসা যেমন চলবে না, তেমনি ধর্ম ব্যবসা কিংবা জুলাই বিক্রির ব্যবসাও চলবে না। জনগণ এখন সচেতন, কোনো চেতনা ব্যবসায়ীকে তারা প্রশ্রয় দেবে না।
সালাউদ্দিন আরও বলেন, কারা যেন জান্নাতের টিকিট বিক্রি করতে চায়। কেউ কি জান্নাতের টিকিট বিক্রি করতে পারে? যারা এ ধরনের চেষ্টা করছে, তারাই ধর্ম ব্যবসায়ী।
বিএনপির সংস্কারের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপির ইতিহাস হলো সংস্কারের ইতিহাস। বিএনপির ইতিহাস রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের ইতিহাস। বিএনপির ইতিহাস যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ইতিহাস। তাই আজ যারা সংস্কারের কথা বলেন- তারা জানেন না, বর্তমানে সংস্কারের জনক হচ্ছেন তারেক রহমান। তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফাই এ দেশের প্রকৃত সংস্কার। আমরা ৩১ দফা সিলগালা করে দেইনি। যৌক্তিক প্রস্তাব এলে তা সংযোজন করা হবে। সংস্কারের শেষ নেই, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।
নির্বাচন ও বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেউ কেউ বলছেন, বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হবে না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমরা বিচার চাই। যারা গণহত্যা করেছে, গুম-খুন করেছে তাদের বিচার অবশ্যই হবে। তবে বিচার একটি ধীর প্রক্রিয়া। এজন্য ট্রাইব্যুনাল বাড়াতে হবে। সংস্কার, বিচার প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন একসাথে চলতে পারে।
সালাউদ্দিন নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় সব ধরনের অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে। প্রতিনিয়ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে একটি শ্রেণি অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ অপপ্রচারের জবাব দিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকতে হবে এবং সত্য তুলে ধরতে হবে।
সম্মেলনে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমনের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুস্তাক মিয়া, জেলা বিএনপির সভাপতি উৎবাতুল বারী আবু ও সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু।