
সাত কলেজ নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের রূপরেখা জানাতে সরকারকে ১৫ দিন সময় বেঁধে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের রূপান্তর টিমের ফোকাল পারসন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
রহমান বলেন, ‘সাত কলেজ নিয়ে কেমন বিশ্ববিদ্যালয় হবে তার একটি রূপরেখা চাচ্ছি। আমাদের যে কমিটি (সাত কলেজেকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখা প্রণয়নে কমিটি) তারা জানিয়েছে তাদের কাজ শেষ। তারা বলছেন, খুব তাড়াতাড়ি দিয়ে দেবেন। তবে, আমরা ১৫ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছি।’
এর মধ্যে সরকারি সাত কলেজের সামনে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাস বা কোনো যানবাহন চলাচল করতে না দেওয়া এবং ও নিউ মার্কেট থানা ঘেরাওয়ের যে কর্মসূচি শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করেছিলেন, তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তারা।
এই দুই কর্মসূচি ছাড়াও শিক্ষার্থীরা বলেছিলেন, ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ‘মুখোমুখি’ অবস্থানে দাঁড় করানোর দায় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদকে পদত্যাগ করতে হবে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবের ওপর ‘হামলার’ ঘটনায় নিউ মার্কেট থানার দায়িত্বশীলদের প্রত্যাহার করতে হবে। একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে ‘ক্ষমা’ চাইতে হবে
এসব দাবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পূরণের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন তারা।
এর মধ্যে কর্মসূচি কেন প্রত্যাহার করে নেওয়া হল তার ব্যাখ্যায় আব্দুর রহমান বলেছেন, ‘দেশের সব রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং শিক্ষকদের সঙ্গে তারা আলোচনায় বসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘২৪ ঘণ্টা আল্টিমেটামের পর আসলে কি হবে? আমরা শিক্ষার্থীরা তৃতীয় পক্ষকে সুবিধা দিতে চাই না। কোনো প্রকার সহিংসতা ঘটে এমন কোন কর্মসূচি আমরা দেব না। তবে যারা দোষী আছে তাদের শাস্তি নিশ্চিতে রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কি সিদ্ধান্ত নেন সেটি আমরা পর্যবেক্ষণ করবো।’
ঢাবি ক্যাম্পাস এবং নীলক্ষেত, নিউ মার্কেট এলাকায় রোববার (২৬ জানুয়ারি) গভীর রাত পর্যন্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাবির শিক্ষার্থীদের ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে।
ওই সংঘর্ষের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আব্দুর রহমান বলেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ‘ব্যক্তিগত আক্রোশ’ নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থী হিসাবে আমরা তাদের প্রতিপক্ষ না, আমরাও তাদের প্রতিপক্ষ না। এটি তাদের কেউ ভুলে যেতে হবে, আমাদের কেউ ভুলে যেতে হবে।’
‘উচ্চ শিক্ষার সর্বোচ্চ মান নিশ্চিতের অভিপ্রায়ে আমাদের পরস্পর পাশাপাশি থেকে কাজ করতে হবে। যা হবে, আশা করি বাস ভাঙচুরের মত কিছু হবে না।’
সংঘর্ষের পর দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে সাত কলেজকে মুক্ত করার ঘোষণা দেন।
এর অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ সেশন অর্থাৎ চলতি বছর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধের কথা বলা হয়।
কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
গত আগস্টে ক্ষমতায় পালাবদলের পর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলে আসছিলেন, অধিভুক্তির কারণে স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়হীনতায় ভুগতে হয় তাদের। নিজেদের পরিচয় দিতে গিয়ে তারা নানা সমস্যায় পড়েন।
সেজন্য ঢাবির থেকে বেরিয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোতে আনার দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা।