.png)
শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ তুলেছে, তাকে আবারও ক্ষমতায় ফেরার শঙ্কায় আটক করেছে বর্তমান বামপন্থি সরকার। শনিবার (২৩ আগস্ট) ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এর আগে শুক্রবার (২২ আগস্ট) কলম্বোর অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) রাষ্ট্রীয় অর্থ অপব্যবহারের অভিযোগে ৭৬ বছর বয়সী এ সাবেক প্রেসিডেন্টকে আটক করে আদালতে হাজির করে রিমান্ডে পাঠায়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি অনুরা কুমারা দিসানায়েকের কাছে পরাজিত হন।
দিসানায়েকে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশজুড়ে দুর্নীতি দমন অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এর মধ্যেই সাবেক প্রেসিডেন্টের গ্রেপ্তার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
প্রধান বিরোধী দল সমাজি জনা বালাওয়েগায়ার (এসজেবি) এমপি নালিন বান্দারা শনিবার কলম্বোর নিউ ম্যাগাজিন কারাগারে রনিলের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) মহাসচিব থালাথা আতুকোরালা অভিযোগ করে বলেন, “রনিল বিক্রমাসিংহে আবার ক্ষমতায় ফিরতে পারেন বলে সরকার ভয় পাচ্ছে। তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।” বর্তমানে সংসদের ২২৫ আসনের মধ্যে ইউএনপির হাতে আছে মাত্র দুটি আসন।
অভিযোগ অনুযায়ী, বিক্রমাসিংহে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কিউবার জি-৭৭ সম্মেলন ও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ থেকে ফেরার পথে ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাজ্যে গিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যবহার করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ—লন্ডনে অবস্থানকালে স্ত্রী মৈত্রিকে উলভারহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানসূচক অধ্যাপনা প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি ১ কোটি ৬৬ লাখ রুপি (প্রায় ৫৫ হাজার ডলার) সরকারি অর্থ খরচ করেছেন।
তবে বিক্রমাসিংহে দাবি করেছেন, “আমার স্ত্রীর ভ্রমণ ব্যয় আমি নিজেই বহন করেছি, কোনো সরকারি অর্থ ব্যয় হয়নি।” কিন্তু সিআইডি বলছে, সরকারি কোষাগার থেকেই এই অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড ও তিনগুণ জরিমানা হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের জেরে দেশজুড়ে বিক্ষোভের পর গোটাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ করলে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন বিক্রমাসিংহে। পরবর্তীতে তার নেতৃত্বে সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিশ্চিত করে এবং কর বৃদ্ধি ও জ্বালানি ভর্তুকি প্রত্যাহারের মাধ্যমে অর্থনীতি স্থিতিশীল করে।
দিসানায়েকে ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতির দায়ে সাবেক দুই মন্ত্রীকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যও সরকারি অর্থ আত্মসাতের মামলায় বিচারাধীন আছেন। এ ছাড়া সম্প্রতি দেশটির পুলিশ প্রধানকে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে অভিশংসিত করা হয় এবং কারা প্রধানকে দুর্নীতির দায়ে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: এএফপি