
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের মৃত্যু দণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় বুধবার (২৬ নভেম্বর) প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারপতির স্বাক্ষরের সঙ্গে রায় ঘোষণার পর আগামী ৩০ দিনের মধ্যে দুই আসামি আপিল করার সুযোগ পাবেন।
এর আগে ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। রায় প্রদান করেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১। অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনাল উল্লেখ করেছে, শেখ হাসিনা ও কামালসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এদের মধ্যে দু’টি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে এবং একটি অভিযোগে আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাজসাক্ষী হিসেবে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
বিচারিক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী বুধবার দুপুর ১২:৪০ মিনিটে ছয় অধ্যায়ে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পাঠ শুরু করেন। দুই ঘণ্টা ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত রায় শেষে দুপুর ২:৫০ মিনিটে শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলা শুরু হয়। ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়, সেই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
প্রাথমিকভাবে এই মামলায় শেখ হাসিনা একমাত্র আসামি ছিলেন। পরে চলতি বছরের ১৬ মার্চ সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করা হয়, যা ট্রাইব্যুনাল মঞ্জুর করেন।
মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগে তিনজনের বিরুদ্ধে মোট ৫টি অভিযোগ আনা হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
১. ১৪ জুলাই গণভবনে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান,
২. হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে নির্মূল করার নির্দেশ,
৩. রংপুরে ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা,
৪. রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা,
৫. আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।
১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়। এ সময়ে সাবেক আইজিপি মামুন নিজের মানবতাবিরোধী অপরাধ স্বীকার করে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হওয়ার আবেদন করেন। ১২ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শুরু হয়ে ২৩ অক্টোবর শেষ হয়। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।
অন্যদিকে, আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন খালাস চেয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এছাড়া রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুনের পক্ষ থেকেও তার খালাসের আবেদন করা হয়।