
মানুষ আর অবৈধ শক্তির দৌরাত্ম্য দেখতে রাজি নয়; রাজধানীর গণসমাবেশে এমন বার্তাই তুলে ধরলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণমানুষ আজ চাঁদাবাজ ও খুনিদের শাসন থেকে মুক্তি চায়।
শুক্রবার ২৮ নভেম্বর সকালে রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা ১৭ আসনের আয়োজিত যুব, ছাত্র ও নাগরিক গণসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
জাহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন যে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদ, শহীদ মুগ্ধ, শহীদ ওয়াসিম শান্তসহ অসংখ্য ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে যে নতুন স্বপ্নের পথ তৈরি হয়েছিল, সেটিকে পুরোনো ফ্যাসিবাদী ও আধিপত্যবাদী দোসররা ভণ্ডুল করার চেষ্টায় নেমেছে। তিনি বলেন, যে রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের সংস্কারে আস্থাশীল নয়, ন্যায় ও ইনসাফ নিশ্চিত করতে চায় না, যারা গত দেড় বছরে দুই শতাধিক মানুষ হত্যা করেছে এবং চাঁদাবাজি ও নারী ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িত, বাংলাদেশের জনগণ তাদের আর রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
অতীতের নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি জানান, ১৯৭৭ সাল থেকে শত শত শিবির কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। বহুজনকে গুম করা হয়েছে, রিমান্ডে নেওয়ার পর নির্যাতন চালানো হয়েছে, আবার ক্রসফায়ারের নামে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনের পরও সংগঠনের সাতজন সদস্য নিখোঁজ, অনেকের হাত কেটে দেওয়া হয়েছে, কারও চোখ উপড়ে নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি প্রভাবের বিষয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, “দিল্লি, পিন্ডি বা লন্ডনে বসে বাংলাদেশ পরিচালনার স্বপ্ন দেখবেন না। এটা দিবা স্বপ্নে পরিণত হবে। যাদের সৎ সাহস আছে, তারা নিরপেক্ষ অবাধ নির্বাচনে অংশ নিক। মানুষ হত্যা করে পরিবেশ নষ্ট করার দিন শেষ।”
তিনি বাংলাদেশকে পৃথিবীর অন্যতম সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে তুলে ধরে বলেন, দেশে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ও বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে, নদীমাতৃক ভৌগোলিক পরিচয়ের কারণে পর্যটনশিল্প বিপুলভাবে বিকশিত হতে পারে। তবে তিনি দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, দেশের মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে, আর নতুন সরকারকে এই মেধা রক্ষা করতে কাজ করতে হবে।
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নারীদের অবদান স্মরণ করে তিনি বলেন, “মা-বোনরা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন, খাবার বিতরণ করেছিলেন। তাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। আমরা চাই ওমর (রা.)-এর মতো ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা, যেখানে মানুষের অধিকার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে।”
নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করে তিনি বলেন, ছাত্রশিবির কোনো ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে নয়; তারা ন্যায় ইনসাফ, বাংলাদেশ এবং আধিপত্যবাদের বিরোধিতার পক্ষে অবস্থান নেবে। যারা সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক, ছাত্রশিবির তাদের সঙ্গে থাকবে।
গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।