
বাংলাদেশ সফরে এসেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপ-কমিটির একটি প্রতিনিধিদল। বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের আগে অংশীদার দেশগুলোতে ইইউ সাধারণত এমন অনুসন্ধানী মিশন পাঠায়। এবার সফরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার উপ-কমিটির চেয়ারম্যান মৌনির সাতৌরি।
সফরের অংশ হিসেবে সাতৌরি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তিনি গত আট বছর ধরে এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের অসাধারণ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং আন্তর্জাতিক মহলকে দায়িত্ব ভাগাভাগি করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে। তবে বাংলাদেশকে একা এই বোঝা বহন করতে দেওয়া যায় না।
সাতৌরি আরও জোর দিয়ে বলেন, টেকসই সমাধান কেবল আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং মিয়ানমারে রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমেই সম্ভব। এজন্য রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন সংকট সমাধানে বৈশ্বিক ঐক্যমতের পথ সুগম করবে।
প্রতিনিধিদলটি সফরকালে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে। বৃহস্পতিবার তারা পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গেও বৈঠক করে। এর আগে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ট্রেড ইউনিয়ন, নিয়োগকর্তা, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে তারা।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে, যাদের বেশিরভাগই মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিপীড়ন, জাতিগত নিধন ও ভয়াবহ সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুত হন। নানা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও আইসিজে-তে আইনি লড়াই সত্ত্বেও এখনো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থমকে আছে।
২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার অভিযোগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়। ওই অভিযানে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়। মাত্র কয়েক মাসে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।