
যুদ্ধবিরতি চললেও গাজায় ত্রাণ সরবরাহে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে, ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তীব্র ক্ষুধা ও দুর্ভোগে ভুগছেন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, সীমিত সীমান্ত খোলার কারণে গাজায় ত্রাণ পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বৈশ্বিক এই সংস্থা দ্রুতগতিতে ফিলিস্তিনিদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বুধবার (৫ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থাগুলো। তবে ইসরায়েলের বিধিনিষেধ এখনও বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে রয়ে গেছে, এমনই সতর্ক করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।
মঙ্গলবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ডব্লিউএফপি মুখপাত্র আবির ইতেফা বলেন, "ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে গত মাসে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু সীমিতভাবে সীমান্ত খোলা থাকার কারণে ত্রাণের পরিমাণ এখনো অত্যন্ত কম।"
ইতেফা আরও বলেন, “আমাদের পূর্ণ প্রবেশাধিকার দরকার। দ্রুতগতিতে ত্রাণ সরানো জরুরি। আমরা সময়ের সঙ্গে দৌড়াচ্ছি। শীত চলে আসছে, অথচ মানুষ এখনো ক্ষুধায় ভুগছেন।”
ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, তারা গাজাজুড়ে ৪৪টি স্থানে খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। তবে সংস্থার মতে, গাজায় প্রবেশ করা খাদ্যের পরিমাণ এখনও পর্যাপ্ত নয়। বিশেষ করে উত্তর গাজায় সরবরাহ করা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। গত আগস্টে বৈশ্বিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি শনাক্ত করেছিল।
ইতেফা বলেন, “উত্তর গাজার প্রবেশপথ এখনো বন্ধ। ফলে আমাদের ত্রাণ কাফেলাগুলোকে দক্ষিণ দিকের দীর্ঘ ও ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় ঘুরে যেতে হচ্ছে। কার্যকর ত্রাণ বিতরণের জন্য সীমান্ত পারাপারের সব পয়েন্ট খোলা দরকার, বিশেষ করে উত্তর দিকেরগুলো।”
যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলি সেনারা ‘ইয়েলো লাইন’-এ পিছু হটায়, ফলে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি উত্তর গাজার বাড়িতে ফিরেছেন। কিন্তু অধিকাংশই দেখেছেন, তাদের বাড়ি এবং আশেপাশের এলাকা ধ্বংসের পর মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। অনেকেই এখনো তাঁবু বা অস্থায়ী আশ্রয়ে বসবাস করছেন।
জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী আরও ত্রাণ গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিতে। শীতের কঠিন সময় ঘনিয়ে আসায় এই আহ্বান আরও জরুরি হয়ে উঠেছে।
গাজার সরকারি তথ্য অফিস জানিয়েছে, ১০ থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ৩ হাজার ২০৩টি বাণিজ্যিক ও ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। অর্থাৎ গড়ে দিনে মাত্র ১৪৫টি ট্রাক প্রবেশ করেছে। যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ৬০০টি ট্রাক প্রবেশ করা উচিত ছিল।
এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী কিছু অংশে হামলা চালানো অব্যাহত রেখেছে। মঙ্গলবার গাজা সিটির তুফাহ এলাকায় ইসরায়েলি কোয়াডকপ্টার হামলায় একজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। উত্তর গাজার জাবালিয়ায়ও সেনাদের গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন, স্থানীয় হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৪০ জন নিহত এবং ৬০৭ জন আহত হয়েছেন।