
হঠাৎ নেওয়া কঠোর এক নীতিগত সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে সব দূতাবাস ও কনস্যুলেটে আফগান নাগরিকদের ভিসা প্রদান স্থগিত করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে এ নির্দেশনা কূটনৈতিক মিশনগুলোতে পাঠিয়েছে, যা কার্যত সব ধরনের ভিসা প্রক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বার্তায় বলা হয়েছে, কোনো আফগান নাগরিককে নতুন ভিসা দেওয়া যাবে না এবং যাদের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে সেগুলো অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। শুধু অভিবাসী বা অ-অভিবাসী ভিসাই নয়, বিশেষ অভিবাসী ভিসাও আর ইস্যু করা হবে না আফগানদের জন্য। এমনকি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা আফগানদের বিদ্যমান ভিসাও বাতিল করা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি লেখেন, “আফগানিস্তানের পাসপোর্টধারী সব ব্যক্তিকে ভিসা দেওয়া বন্ধ করছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্কিন জনগণের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার গুরুত্ব আমাদের কাছে সর্বোচ্চ। কোনোভাবেই এর সঙ্গে আপোস হবে না।”
এই সিদ্ধান্তের পেছনে ত্বরান্বিত কারণ হিসেবে উঠে এসেছে গত বুধবারের একটি হামলার ঘটনা। সেদিন ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালান আফগান নাগরিক রহমানউল্লাহ লাকনওয়াল। এতে দুই গার্ড সদস্য গুরুতর আহত হন, যাদের একজন পরে হাসপাতালে মারা যান।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, লাকনওয়াল ছিলেন সিআইএ-এর একজন এজেন্ট, যিনি মার্কিন-ন্যাটো অভিযানের সময় আফগানিস্তানে কাজ করতেন। ২০২১ সালে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের অনুমতিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পান।
হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা জানায়, যেসব আফগান নাগরিক স্থায়ী বসবাস বা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন, তাদের সব আবেদন বাতিল করা হয়েছে। এরপর শনিবার বিশ্বের সব মার্কিন মিশনে তারবার্তা পাঠিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন এই অবস্থান আরও সুদৃঢ় করে।
২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করা আফগানদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। তালেবান ক্ষমতায় এলে তাদের টার্গেট করা হতে পারে; এমন আশঙ্কা থেকেই বাইডেন প্রশাসন বিশেষ ভিসা ও শরণার্থী কর্মসূচির আওতায় প্রায় দুই লাখ আফগানকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ দেয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন ঘোষণার ফলে সেই কর্মসূচিতে এসে থাকা সব আফগানের ভিসাও বাতিল হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আফগানদের সহায়তাকারী মার্কিন অলাভজনক সংস্থা আফগান ইভ্যাকের প্রেসিডেন্ট শন ভ্যানডিভার রয়টার্সকে ইমেইলে জানান, “এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।”