
কুষ্টিয়ায় জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় ছয়জনকে হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফসহ চার আসামির বিরুদ্ধে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করবে প্রসিকিউশন। একই দিনে প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দিও নেওয়ার কথা রয়েছে।
মঙ্গলবার ২৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ এই কার্যক্রম শুরু হবে। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের যে প্যানেল গঠন করা হয়েছে, তার অন্য দুই সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যে মামলার প্রেক্ষাপটসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হবে, এরপর শুরু হবে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়। এর আগে ২ নভেম্বর হানিফসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল-২। সেই আদেশে আজকের দিনটি সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নির্ধারিত হয়।
হানিফ ছাড়াও মামলার অন্য তিন আসামি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সদর উদ্দিন খান, জেলা সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী এবং শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা।
বিচার শুরুর দিন ট্রাইব্যুনালে তাদের বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার ও আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
এর আগে ২৮ অক্টোবর পলাতক চার আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন অভিযোগ পড়ে শোনান। তিনি শুরুতেই ফরমাল চার্জে উল্লেখ করা মামলার পটভূমি নিয়ে আপত্তি তোলেন এবং পরবর্তীতে তিনটি অভিযোগে অব্যাহতি চান। আর ২৭ অক্টোবর এই মামলায় প্রসিকিউশনের শুনানি শেষ হয়।
২৩ অক্টোবর আসামিদের গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ থাকলেও তারা পলাতক থাকায় আদালত তাদের জন্য স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ করে। এর আগেও ১৪ অক্টোবর আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। হাজির না হওয়ায় জাতীয় দুই দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেওয়া হয়। ৬ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। প্রসিকিউশন ৫ অক্টোবর অভিযোগপত্র জমা দেয়, যেখানে উসকানিমূলক বক্তব্য, ষড়যন্ত্র এবং কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যার অভিযোগ উল্লেখ করা হয়।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। তাতে প্রাণ হারান শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম, সুরুজ আলী বাবু, শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিন, উসামা, ব্যবসায়ী বাবলু ফরাজী এবং চাকরিজীবী ইউসুফ শেখ। আহত হন আরও অনেকে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে হানিফসহ চারজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয় এবং তদন্ত সংস্থা পরবর্তীতে প্রতিবেদন দাখিল করে।