
রাজধানীর উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে ক্লাস চলাকালে শিক্ষক ছুড়ে মারা ডাস্টারের আঘাতে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফিউর রহমান আহাদ গুরুতর আহত হয়েছে। তার মাথা ফেটে রক্তক্ষরণ হলে সহপাঠীরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার, ৯ নভেম্বর। এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভে নামে। প্রতিবাদের মুখে অভিযুক্ত শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে তাৎক্ষণিকভাবে চাকরি থেকে বহিষ্কার করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম কলেজের পৌরনীতি বিষয়ের অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ক্লাস চলাকালে তিনি সামনের বেঞ্চে বসা এক শিক্ষার্থীকে কথা বলতে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে হাতে থাকা ডাস্টার ছুড়ে মারেন। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ডাস্টারটি গিয়ে লাগে পাশের বেঞ্চে বসা আহাদের মাথায়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহাদ জানান, “রফিকুল স্যার ক্লাস নিচ্ছিলেন। সামনের বেঞ্চের এক ছাত্র পাশের জনের সঙ্গে কথা বলছিল। তখন স্যার রেগে গিয়ে হাতে থাকা ডাস্টার ছুড়ে মারেন। কিন্তু যাকে উদ্দেশ্য করে ছোঁড়া হয়েছিল, সে সরে যায়; ডাস্টারটি এসে আমার মাথায় লাগে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়ে যাই। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে দেখি, ব্যাগ রক্তে ভিজে গেছে। মাথায় হাত দিতেই দেখি রক্ত ঝরছে। বন্ধুরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।”
আহাদের বড় বোন খাদিজা রহমান হেরা জানান, “রফিকুল ইসলাম নামের এক শিক্ষক অন্য ছাত্রকে শাসন করতে গিয়ে আমার ভাইয়ের মাথায় ডাস্টার ছুড়ে মেরেছেন। আমরা থানায় অভিযোগ দিয়েছি।”
উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফরিদুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ওই শিক্ষক ছাত্রকে ডাস্টার ছুড়ে আঘাত করেছেন। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ক্লোজড করেছি এবং চেয়ারম্যান স্যারকে জানিয়েছি।”
তিনি আরও জানান, রফিকুল ইসলাম ২০২৪ সালে অস্থায়ী ভিত্তিতে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। সোমবারের ঘটনার পর তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং তার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সব সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, “ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো ধরনের নির্যাতন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ঘটনায় শিক্ষককে বরখাস্ত করা সঠিক সিদ্ধান্ত। প্রয়োজনে শিক্ষা বোর্ড ও মন্ত্রণালয় থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘটনার পর মঙ্গলবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেছে। তাদের অভিযোগ, একসময় সুনামধন্য এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলায় জর্জরিত। তারা বলেন, কলেজের টিউশন ফি বাড়লেও শিক্ষার মান ক্রমে নিম্নগামী। ফলাফলেও ধারাবাহিক ব্যর্থতা দেখা দিচ্ছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করে বলেন, বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবরেটরির সরঞ্জাম ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, ক্যান্টিনের খাবারের মান অত্যন্ত খারাপ এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাও নেই। তাদের দাবি, “ট্যাপের পানি পানযোগ্য নয়।” শিক্ষার্থীরা আরও দাবি করে যে, কিছু অদক্ষ শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাদের কার্যকর কোনো তদারকি নেই।