
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত বিএনপি নেতা মফিজুর রহমান মুকুলকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা এখনও স্থিতিশীল নয়।
ঘটনার সময় মুকুলের সঙ্গে থাকা জেলা বিএনপির সদস্য হযরত আলী রাত সোয়া ১টায় বলেন, “মুকুল ভাইয়ের অবস্থা ভালো নয়। এভারকেয়ার হাসপাতালে তার সিটি স্ক্যান করার পর ডাক্তার জানিয়েছেন, তার দেহের তিনটি গুলি মূত্র থলি, কিডনি ও লাঞ্চে এফেক্ট করেছে। সবাই মুকুল ভাইয়ের জন্য দোয়া করুন।”
পুলিশ সুপার (এসপি) এহতেশামুল হক জানান, মুকুলের উপর হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি আরও বলেন, “ইতিমধ্যে ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশের একাধিক গোয়েন্দা টিম কাজ শুরু করেছে। হামলাকারীরা কোনোভাবেই রেহাই পাবে না। অপরাধীরা ধরা পড়বেই।” এসপি শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এই তথ্য জানান এবং নিজেই রাতেই নবীনগরে আসবেন বলে জানান।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে নবীনগর উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক ও বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুকুল তার বাড়ি ফিরে আসার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হন। পারিবারিক সূত্র জানায়, পদ্মপাড়ার আদালত সংলগ্ন এলাকায় আকস্মিকভাবে হামলার শিকার হন তিনি। আহত মুকুলকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার পর নবীনগরের রাজনৈতিক ও সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) পিয়াস বসাক ও নবীনগর থানার ওসি শাহীনূর ইসলাম এখনও ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
গুলিবিদ্ধ মুকুলের ছোট ভাই মুজিবুর রহমান শামীম জানান, তার বড় ভাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নবীনগর বাজার থেকে রিকশায় করে আদালত পাড়া সংলগ্ন বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির সামনে এসে রিকশা থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে পেছন থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়।
স্থানীয় বিএনপির দুই শক্তিশালী গ্রুপ থাকলেও উভয় পক্ষ জানিয়েছে, মুকুল তাপস গ্রুপের অনুসারী নেতা হিসেবে পরিচিত। “মুকুল স্বজ্জন ও ভালো মানুষ হওয়ায় তার কোনো শত্রু আছে বলে আমাদের কারো জানা নেই। তাই কারা তার ওপর হামলা চালিয়েছে, তা আমাদেরকে বেশ ভাবিয়েছে,” নেতারা জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান চিকিৎসক ডা. হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, “গুলিবিদ্ধ মুকুলের পিঠে দুটি ও পাছায় একটি গুলি লেগেছে। তার অবস্থা ভালো নয়। তাই তাকে দ্রুত আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় রেফার করি।”
নবীনগর থানার ওসি শাহীনূর ইসলাম শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জানান, “ঘটনার খবর শুনেই পুলিশের সার্কেল স্যারসহ আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। ঘটনাস্থল থেকে ইতিমধ্যেই তিনটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।” তিনি বলেন, পুলিশ উভয় সম্ভাবনা; রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নিয়ে তদন্ত করছে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মান্নান রাতেই বলেন, “নবীনগর সদরে সন্ধ্যায় কোনো রাজনৈতিক নেতা এভাবে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমি পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দ্রুত তদন্ত ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করার আহবান জানিয়েছি।”
জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক কাজী নাজমুল হোসেন তাপসের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাপস গ্রুপের নেতা হযরত আলী বলেন, “গুলিবিদ্ধ মুকুল ভাইকে নিয়ে আমরা ঢাকায় যাচ্ছি। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। তবে এ ঘটনার পর আমরা নিজেরাও চরম আতঙ্কে আছি। উপজেলা সদরে এরকম জঘন্য গুলির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারের জোর দাবি করছি।”
উল্লেখ্য, সম্প্রতি নবীনগরে খুন, চুরি ও ডাকাতির ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকার আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটাপন্ন। ঘটনার ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে।