
বর্ষার শুরু থেকে দীর্ঘ সময় পর্যটকশূন্য থাকার পর সাপ্তাহিক ছুটিতে আবারও সরব হয়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা। অনুকূল আবহাওয়া ও ছুটির দিনে বিপুল সংখ্যক ভ্রমণপিপাসুর আগমনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে পর্যটন নগরী। এতে দীর্ঘদিনের মন্দা কাটিয়ে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ব্যবসায়ীদের মুখে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকাল থেকে কুয়াকাটার সৈকত ও আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভিড় জমাতে দেখা যায় পর্যটকদের। লেম্বুরবন, শুঁটকিপল্লী, গঙ্গামতির চর, রাখাইন পল্লী, ইলিশ পার্ক, মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধবিহার কিংবা সৈকতের ঝাউবাগান—সব জায়গাতেই পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। কেউ মেতে ওঠেন সাগরের নোনা জলে স্নানে, কেউবা উপভোগ করেন বর্ষার উত্তাল ঢেউ আর প্রকৃতির সৌন্দর্য।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক রাশেদুল ইসলাম বলেন, “কুয়াকাটায় এর আগেও কয়েকবার এসেছি। তবে বর্ষা মৌসুমে আসা হয়নি। তাই এই সময়টা বেছে নিয়েছি কুয়াকাটায় আসার জন্য। এর কারণ হচ্ছে বর্ষা মৌসুমে সমুদ্র অনেক উত্তাল থাকে এবং সমুদ্রে বড় বড় ঢেউ দেখা যায়। এছাড়া বৃষ্টিময় সৈকত খুবই ভালো লাগে তাই এই সময় কুয়াকাটায় আসলাম।”
পর্যটকদের উপস্থিতিতে খুশি স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ জানান, বর্ষার শুরু থেকে সৈকত প্রায় ফাঁকাই ছিল। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সরকারি ছুটি থাকলেও তেমন পর্যটক আসেনি। তবে শুক্রবার পরিস্থিতি বদলেছে। “আজকে কুয়াকাটায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ রুম বুকড রয়েছে। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে আরও পর্যটক আসবে।”
সৈকতের ফটোগ্রাফার আরিফ বিল্লাহ বলেন, “এমন একটি পেশায় কাজ করি, যা নির্ভর করে পর্যটকদের উপস্থিতির ওপর। বর্ষার শুরুতে কুয়াকাটা ছিল প্রায় খালি। তবে আজ ছুটির কারণে অনেক পর্যটক এসেছেন। ফলে আমরা ভালো আয় করতে পেরেছি।”
কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টোয়াক) সেক্রেটারি জহিরুল ইসলাম জানান, অনেকদিন পর সৈকতে আশানুরূপ ভিড় দেখা গেছে। “পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে কুয়াকাটা। এখানে ১৬ ধরনের পেশার মানুষ সরাসরি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। তাই এই ভিড় আমাদের জন্য বড় স্বস্তি।”
অপরদিকে, আগতদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। কুয়াকাটা রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, “সাপ্তাহিক ছুটিকে কেন্দ্র করে আমরা বিভিন্ন পয়েন্টে একাধিক টিম নিয়োজিত করেছি। ছুটির দিনে পর্যটকদের ভিড় বাড়ে, তাই তাদের সেবায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।”
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বর্ষার এই ভিড় ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। দেশের অভ্যন্তরীণ ভ্রমণপিপাসুদের আগ্রহ, চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি কুয়াকাটাকে আগামী দিনে আরও বেশি পর্যটকবান্ধব গন্তব্যে পরিণত করবে।