নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার মেঘনাবেষ্টিত জাগলার চরের জমি দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬। এই সংঘর্ষে নিহত আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় চরের বনাঞ্চল থেকে উদ্ধার হওয়া মরদেহের পরিচয় জানা গেছে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম শামছুদ্দিন ওরফে কোপা শামছু (৫৫), যিনি ‘সন্ত্রাসী’ শামছু বাহিনীর প্রধান হিসেবে পরিচিত।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত লাশটি থানায় ফেরানো হয়নি। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, শামছুদ্দিন হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার একই সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিলেন ‘সন্ত্রাসী’ আলাউদ্দিন বাহিনীর প্রধান আলাউদ্দিন, মোবারক হোসেন, আবুল কাশেম, হক সাব ও কামাল উদ্দিন। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের পর বুধবার রাতে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় আজ সকালে হাতিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত শামছুদ্দিনের ছোট ভাই আবুল বাশার মামলার বাদী হয়েছেন। মামলায় ৩০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও ১০–১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে একই ঘটনায় নিহত অপর বাহিনী প্রধান আলাউদ্দিনের পরিবারের কেউ এখনও মামলা করতে থানায় যাননি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ওসি মো. সাইফুল বলেন, “একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।”
গত মঙ্গলবার হাতিয়া উপজেলার সুখচর ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডসংলগ্ন মেঘনায় নতুন জাগলার চরের দখলকে কেন্দ্র করে তিনটি সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে ধারাবাহিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়। সংঘর্ষে কোপা শামছু, আলাউদ্দিন ও ফরিদ কমান্ডারের নেতৃত্বাধীন দলগুলো অংশগ্রহণ করে। এই ঘটনায় তিন পক্ষের লোকজনও হতাহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কোপা শামছুর ছেলে মোবারক হোসেন, আবুল কাশেম, হক সাব ও কামাল উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে। আলাউদ্দিনের লাশ জেলা সদরের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয়। চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চরের জমি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে দখলের প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর। প্রথমে জাহাজমারা ইউনিয়নের কোপা শামছু বাহিনী জমি দখলে নিয়ে বিক্রি শুরু করে। এরপর সুখচর ইউনিয়নের আলাউদ্দিন বাহিনীরাও একই চরে দখল নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। পরে তারা জাগলার চরের খাসজমিও বিক্রি করতে থাকে। প্রতি একর জমি ২০–২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হতো। কিছু মাস আগে এই দুই বাহিনীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যুক্ত হয় ফরিদ কমান্ডারের বাহিনী। এরপর থেকেই তিনটি বাহিনীর মধ্যে জমি দখল নিয়ে বিরোধ ও সংঘর্ষ চলছিল। সর্বশেষ ঘটনায় দুই বাহিনীর দুই প্রধানসহ মোট ছয়জন নিহত হয়েছেন।