
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে চুরির অভিযোগে এক যুবককে নির্যাতনের পর নাকে খত দিয়ে গ্রামের মধ্য দিয়ে ঘোরানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) এই ঘটনা ভায়না ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের কালিশংকরপুর গ্রামে ঘটেছে। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রাতেই ভাইরাল হয়।
নির্যাতনের শিকার যুবকের নাম রসুল আলী (২৮), তিনি ওই গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে।
জানা যায়, গত শুক্রবার রাতে গ্রামের পল্লী চিকিৎসক এনামুল হকের বাড়িতে গরু চুরির ঘটনা ঘটে। এরপর শনিবার দুপুর ৩টার দিকে সালিশের নামে রসুলকে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ডেকে নিয়ে আসে স্থানীয়রা। সেখানে তাকে চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করা হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, যুবককে মাটিতে শুইয়ে নাক মাটিতে ঘষতে ঘষতে গ্রামের মধ্যে ঘোরানো হচ্ছে। এরপর তাকে তুলে কান ধরে উঠবস করানো হয় এবং মারধর করতে করতে গ্রামের বাইরে বের করা হয়। ওই সময় কেউ বিচারবিরোধী কথা বললে তাকে ও বিচার করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, নাক খত দিয়ে যুবককে গ্রাম ঘোরানো বিএনপি নেতার নাম সিরাজুল ইসলাম। তিনি ভায়না ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। সিরাজুল ইসলাম ঘটনা স্বীকার করে বলেন, “শুক্রবার রাতে ওই যুবক আমার গ্রামের এনামুল ডাক্তারের বাড়িতে গরু চুরি করতে গিয়েছিল। পরিবারের লোকজন জেগে উঠায় সে পালিয়ে যায়। পরে দুই গ্রামের মাতব্বরা তাকে নাকে খত দিয়ে তার পরিবারের জিম্মায় দিয়েছে।”
আইনবিরুদ্ধ সালিশের বিষয়ে প্রশ্ন করলে সিরাজুল ইসলাম বলেন, “পুলিশে দিলে ওর বড় ক্ষতি হতো। গ্রামের লোকজন হাত-পা ভেঙে দিতে চেয়েছিল। তাই মাত্র দশ হাত নাকে খত দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি।”
পল্লী চিকিৎসক এনামুল হক জানান, রসুল তার বাড়িতে গরু চুরি করতে ঢুকেছিল। তবে তার ছেলে ও পরিবারের অন্যরা ঘটনায় জেগে ওঠায় যুবক পালিয়ে যায়। পরে তিনি গ্রামের মাতব্বরদের কাছে বিচার দেন।
রসুলের বাবা আব্দুল মান্নান ঘটনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ভায়না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা তুষার বলেন, “এমন ঘটনার কথা শুনেছি, তবে এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।”
হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, “আইন বহির্ভূত সালিশ কেউ করতে পারে না। নির্যাতিত যুবক বা তার পরিবারের কেউ থানায় অভিযোগ দেয়নি। তবুও আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।”