
মাত্র ১৯ দিনেই চলতি নভেম্বর বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩১ শতাংশ বেশি। ধারাবাহিক এই প্রবৃদ্ধি বজায় থাকলে মাস শেষ হওয়ার আগেই রেমিট্যান্স তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে। গত বছর শুধুমাত্র রমজানের ঈদকে ঘিরে একবার তিন বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স আসে।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্স দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৬ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৪০ কোটি ডলার। ফলে এ সময়ে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৬ শতাংশের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের নভেম্বরে দেশে এসেছিল ২২০ কোটি ডলার। আর চলতি নভেম্বরের প্রথম ১৯ দিনে দৈনিক গড়ে এসেছে ১০ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। এই গতি অব্যাহত থাকলে পুরো মাসে রেমিট্যান্স পৌঁছাতে পারে ৩১৭ কোটি ডলারে। এর আগে কোনো এক মাসে সর্বোচ্চ ৩৩০ কোটি ডলার এসেছিল গত বছরের মার্চে, আর শুধু এই একবারই তিনশ কোটি ডলারের সীমা অতিক্রম হয়েছিল।
গত অক্টোবরেও রেমিট্যান্স প্রবাহ শক্তিশালী ছিল, সে মাসে এসেছে ২৫৬ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৭ কোটি ডলার বেশি। আগের অর্থবছর শেষে মোট রেমিট্যান্স দাঁড়িয়েছিল রেকর্ড তিন হাজার ৩৩ কোটি ডলারে।
সরকার পরিবর্তনের পর থেকে অর্থ পাচার রোধে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, যার কারণে হুন্ডির ব্যবহার কমে গিয়ে রেমিট্যান্সের বড় অংশ এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে। একই সঙ্গে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি এবং বিদেশি ঋণ বেড়ে গত জুন শেষে ১১ হাজার ২১৬ কোটি ডলারে পৌঁছানো বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াতে সহায়তা করেছে। এতে ডলারের বিনিময় হার ১২২ থেকে ১২৩ টাকার মধ্যে স্থিতিশীল রয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ডলারের দরে এই স্থিতি এবং আমদানি খাতে ডলার সংকট না থাকা সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতি কমার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গত অক্টোবর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে, যা তিন বছর ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ধারাবাহিক বৃদ্ধির মধ্যে ১৬ নভেম্বর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারে। বিপিএম৬ পদ্ধতিতে যার পরিমাণ ২৬ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার। এ মাসের শুরুতে আকুর বিল পরিশোধের আগে ৩০ অক্টোবর বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ উঠেছিল ২৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব পদ্ধতিতে ৩২ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারে। বর্তমান রিজার্ভ বিগত ৩১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে গত বছরের জুলাই শেষে বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ নেমে গিয়েছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ছিল ২৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।