
ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাক কারখানার শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাস (২৮)-কে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় নিবির ইসলাম অনিক (২০) নামে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সর্বশেষ এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে মামলাটিতে আটক ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়াল ১৯ জনে।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। এর আগে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী পশ্চিম থানার চেরাগআলী এলাকা থেকে অনিককে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবির তথ্য অনুযায়ী, অনিক ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা ইউনিয়নের মধ্য ভাটিবাড়ি এলাকার মো. কালিমুল্লাহর ছেলে। তিনি একই কারখানায় নিটিং অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এ ঘটনায় বিস্তারিত জানিয়ে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “দিপুকে নির্মমভাবে হত্যা করে রশি দিয়ে মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে পরবর্তীতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। হত্যার পর মরদেহ রশি দিয়ে গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছিল অনিক। একই কারখানায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ করত অনিক। কিন্তু হত্যার ঘটনাটি দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলে তিনি চাকরি আর যোগ না দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। ঘটনার ভিডিও দেখে অনিককে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
পুলিশ জানায়, ১৮ ডিসেম্বর রাতে ভালুকার ডুবালিয়াপাড়া এলাকায় দিপু চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। সে সময় তিনি পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানার ভেতরে ছিলেন। কারখানার সামনে লোকজন জড়ো হলে তাকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়। রাত ৯টার দিকে কারখানা থেকে বের করা হলে বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে গণপিটুনি দেয়। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে মরদেহ ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে একটি গাছে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই অপু চন্দ্র দাস ভালুকা মডেল থানায় বাদী হয়ে ১৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে মামলা করেন। র্যাব ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে প্রথমে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে। ময়মনসিংহ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
প্রথম দফায় গ্রেপ্তারদের মধ্যে ছিলেন— পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ আলমগীর হোসেন (৩৮), কোয়ালিটি ইনচার্জ মিরাজ হোসেন (৪৬), শ্রমিক তারেক হোসেন (১৯), লিমন সরকার (২২), মানিক মিয়া (২০), এরশাদ আলী (৩৯) ও নিঝুম উদ্দিন (২০); ভালুকার বাসিন্দা আজমল হাসান (২৬), আশিকুর রহমান (২৫), কাইয়ুম (২৫) ও শাহিন মিয়া (১৯); এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা মো. নাজমুল (২১)।
এর ধারাবাহিকতায় বুধবার মধ্যরাতে ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের কাশর এলাকা থেকে ডিবি আরও ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন- ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানা এলাকার নূর আলম (৩৩), তারাকান্দা থানা এলাকার মো. শামীম মিয়া (২৮), সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ থানার তাকবির (২২), ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি থানার রুহুল আমিন (৪২), নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার সেলিম মিয়া (২২) এবং মাদারীপুরের শিবচর থানার মো. মাসুম খালাসী (২২)। আদালত তাদের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ১৯ জনের মধ্যে পাঁচজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, নিহত দিপু চন্দ্র দাস ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়া কান্দা গ্রামের বাসিন্দা রবি চন্দ্র দাসের ছেলে। তিনি দুই বছর ধরে পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানায় কর্মরত ছিলেন।