
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে বিএনপি ও অন্যান্য ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, “ইনশাআল্লাহ আমরা বিভক্ত জাতি আর দেখতে চাই না। জাতিকে যারা বিভক্ত করে, তারা জাতির দুশমন।” তিনি আরও জানান, জনগণের সম্পদ চুরি বা দুর্নীতির মতো কাজ তার দলের অভিজ্ঞতার অংশ নয়।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় ঢাকা শহরের ১৭ আসনের যুব, ছাত্র ও নাগরিক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
জামায়াত আমির বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির রোজার আগে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, জনগণ যাদের কর্মসূচি সমর্থন করবে এবং যাদের বক্তব্যে আস্থা রাখবে, তারা নির্বাচিত হবেন। “আমরা তাদের অভিনন্দন জানানোর জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদি আমাদের দলকে জনগণ বেছে নেয়, আমরা সকল রাজনৈতিক দল এবং শক্তিকে আহ্বান জানাবো। আপনারাও আমাদেরকে সমর্থন দেবেন, অভিনন্দন জানাবেন এবং আপনাদের সাথে নিয়েই আমরা দেশ গড়বো ইনশাআল্লাহ।”
তিনি উল্লেখ করেন, কিছু রাজনৈতিক নেতা ইতোমধ্যেই বলেছেন, তারা নির্বাচিত হলে ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করবেন, তবে ‘ইল্লাল্লা জামাতে ইসলামী’ অর্থাৎ জামায়াতে ইসলামী ছাড়া। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “জনগণ যদি মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের নির্বাচিত করে ইনশাআল্লাহ, আমরা আপনাদেরও বাদ দেবো না। সবাইকে সাথে নিয়ে আমরা দেশ গড়বো ইনশাআল্লাহ।”
জাতিকে বিভক্তকারী গোষ্ঠীকে ‘জাতির দুশমন’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বিভক্ত জাতি আর দেখতে চাই না। আমরা ওই দুশমনের রাষ্ট্রের চাষ আর বাংলাদেশে হতে দেবো না।” তিনি পুরোনো রাজনীতির সমালোচনা করে নতুন ফর্মুলায় দেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, “আমরা স্বীকার করি আমাদের অভিজ্ঞতা নাই, জনগণের সম্পদ চুরি করার অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। দলীয় কর্মীদেরকে দিয়ে চাঁদাবাজি করার অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গণ কায়েম করার অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। সর্বপর্যায়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দুর্নীতি করার অভিজ্ঞতা আমাদের নেই।”
তিনি বর্তমান ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেন, ফ্যাসিবাদ বিদায় নেয়নি, বরং এখন এটি দেশে ‘ফেসি’ হিসেবে বিদ্যমান। তিনি দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলদারী এবং নারীদের সম্মান হরণকে ফ্যাসিবাদের পাঁচটি প্রধান লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
জামায়াত আমিরের মতে, পুরোনো ফর্মুলা আর চলবে না। নতুন বাংলাদেশ হবে নতুন ফর্মুলায়। সরকারের দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, “প্রত্যেক নিয়োজিত ব্যক্তি নিজের জন্য চিন্তা করার আগে জনগণের স্বার্থ নিয়ে ভাববে… যে সরকার জনগণের সাথে প্রতারণা করবে না… যে সরকার দুর্নীতিতে জড়াবে না।”
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিপুল রক্ত ও জীবন দিয়েও জনগণ স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল ভোগ করতে পারেনি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আমাদের মাটির নিচে বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদ, সমুদ্রের নিচে অকল্পনীয় সম্পদ থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন বিশ্বের বুক উঁচু করে দাঁড়াতে পারিনি?”
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের বাইরে পালায়নি। “দেশের ভিতরে আমরা মহাজির ছিলাম। দেশের মাটিকে কামড়ে ধরেছিলাম। বুকে জড়িয়ে এখানেই ছিলাম। জেল বরণ করেছি। জীবন দিয়েছি। কিন্তু দেশ ছেড়ে আমরা পালাইনি। কারণ আমরা এই দেশকে এই মাটিকে এই মানুষকে ভালোবাসি।”