
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্বল প্রশাসনিক নজরদারির মধ্যে দেশে চাঁদাবাজির মাত্রা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তাঁর দাবি, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে, এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে একে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।
মঙ্গলবার রাজধানীর অর্থ মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ছাড়া, রাজনৈতিক সরকার ছাড়া এই সংকট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।”
তিনি বলেন, “আগে যেখানে এক টাকা চাঁদা নেওয়া হতো, এখন সেখানে দেড় বা দুই টাকা নেওয়া হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন পক্ষ এতে জড়িয়েছে। আগে যারা এতে যুক্ত ছিল না, তারাও এখন রয়েছে। এমনকি যারা চাঁদাবাজি করছে, তারা অনেকেই ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য।”
চাঁদাবাজির প্রভাবে বাজারে পণ্যমূল্য বাড়ছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করার দায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের নয়। তাঁর ভাষায়, “চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করা আমার মন্ত্রণালয়ের কাজ না। আর অন্তর্বর্তী সরকার ‘একে ধরো, ওকে ধরো’ নীতিতে চলছে না।”
এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, চলতি অর্থবছরের জুনের মধ্যে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ৭ শতাংশে নেমে আসবে।
ফেব্রুয়ারিতে ফেরার সম্ভাবনা পাচার হওয়া অর্থের একাংশ
দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা জানান, একটি অংশ আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই দেশে ফিরে আসতে পারে। তবে পুরো প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি এবং জটিল।
তিনি বলেন, “টাকা যারা পাচার করে, তারা খুবই কৌশলী। বিষয়টি খুব জটিল। অনেক লিগ্যাল ফার্মের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিছু অগ্রগতি হয়েছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে কিছু অর্থ ফেরার সম্ভাবনা আছে। বাকি অংশ ফেরাতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”
ড. সালেহউদ্দিন আরও বলেন, “এ ধরনের প্রক্রিয়া কোনো সরকার এড়াতে পারবে না। এটা আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া, বাঁধাধরা নিয়মে চলতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তথ্য সংগ্রহ করছে। কিছু বিদেশি অ্যাকাউন্ট এরই মধ্যে ফ্রিজও করা হয়েছে।”
যখন তাঁকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি বলেন, “এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলতে পারবেন।”
ডিসেম্বরে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হচ্ছে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র
প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চালু হতে যাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা হিসেবে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি জানান, “আমরা নভেম্বরেই চালুর জন্য রাশিয়াকে চিঠি দিয়েছিলাম। তারা জানিয়েছে, ডিসেম্বরে চালু করবে। এরই মধ্যে কেন্দ্রের জ্বালানি এসে গেছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) কিছু সুপারিশ দিয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন চলছে।”
তবে এখনো কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের ইউনিটমূল্য নির্ধারণ করা হয়নি বলেও তিনি জানান।
পরবর্তী মন্ত্রী হওয়ার আগ্রহ নেই অর্থ উপদেষ্টার
নিজেকে পরবর্তী সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দেখার কোনো ইচ্ছা নেই বলেই জানিয়েছেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “উপদেষ্টা হওয়ার আগে আমি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে পড়াতাম। এখনো তারা আমার রুম রেখেছে, গাড়িও ফেরত নেয়নি। ড্রাইভার মাঝেমধ্যে ফোন করে জানতে চায়, ‘স্যার, গাড়ি আনব?’ এটা আমার জন্য বড় স্বস্তির জায়গা।”
নিজের কর্মজীবনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি যেখানেই কাজ করেছি, সততার সঙ্গে করেছি। সব সরকারের সময়ই ভালো ভালো জায়গায় কাজ করেছি; বার্ড, পিকেএসএফ, এনজিও ব্যুরো, শেষে গভর্নর হিসেবেও তিনটি সরকার পেয়েছি।”
তিনটি পরিবারের একটি এখনো খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায়
দেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এখনো উদ্বেগজনক হারে বিদ্যমান বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১০টি পরিবারের মধ্যে তিনটি পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
তিনি বলেন, “দেশে এখনো শিশু ও মায়েদের মধ্যে পুষ্টিহীনতার সমস্যা রয়েছে। আমরা কিছুটা নিউট্রিশনের ঘাটতি কাটানোর চেষ্টা করছি। জেলেদের জন্য চাল বরাদ্দসহ বিশেষ ট্রাকে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের খাদ্যাভ্যাস এখনো সুষম নয়। চালের ওপর নির্ভরতা বেশি, আমিষ গ্রহণ কম। ডিমের মতো আমিষ এখনো অনেকে কিনতে পারছে না।”
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার খাদ্য সহায়তা ও পুষ্টি সংশ্লিষ্ট উদ্যোগ নিচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।