
আশুলিয়ায় ছয় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে আদালতে হাজির হওয়া পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ আবজালুল হককে জেরা করার সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) তার সাক্ষ্যগ্রহণকে কেন্দ্র করে আসামিপক্ষ ও প্রসিকিউশনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা চরমে ওঠে, যার ফলে প্রায় এক ঘণ্টা আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়।
সকালে আবজালুলের দেওয়া সাক্ষ্যের ওপর জেরা চালাতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বিচারকাজ সাময়িক স্থগিত করা হয়। প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম অভিযোগ করেন, “বিচার বাধাগ্রস্ত করতেই আসামিপক্ষ এমনটা করছে।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা ও মরদেহ পোড়ানোর অভিযোগে সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে এসআই আবজালুল জবানবন্দি দেন। তার সাক্ষ্য ট্রাইব্যুনাল-২ এর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল রেকর্ড করেন।
জবানবন্দিতে এসআই আবজালুল হক জানান, আশুলিয়া থানার তৎকালীন ওসি সায়েদ, এএসআই বিশ্বজিৎসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য থানার সামনে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করেন এবং পরে পেট্রোল ঢেলে মরদেহগুলো পুড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট নিহত ওই শহিদদের জন্য কিছু করতে না পারায় তিনি এবং নিহতদের পরিবার আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
২৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে আবজালুল ৫ আগস্টের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। যদিও তিনি স্বীকার করেন, মরদেহ পোড়ানোর মুহূর্তে তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
আবজালুল জানান, গত বছরের ১৫ আগস্ট নিজের ইস্যুকরা আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিতে এসে তিনি মরদেহ পোড়ানোর বিষয়টি জানতে পারেন। তার দাবি, তৎকালীন ওসি সায়েদ ও এএসআই বিশ্বজিৎ ছয় মরদেহ পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে দেন। সাক্ষ্যের শেষে তিনি আবারও ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চান।
চলতি বছরের ২১ আগস্ট এই মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ওইদিন উপস্থিত আট আসামির মধ্যে সাতজন নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে এসআই আবজালুল হক দোষ স্বীকার করেন এবং রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন জানান। আদালত তার জবানবন্দির দোষ স্বীকারের অংশটি রেকর্ড করে এবং লিখিত আবেদন বিবেচনায় নিয়ে তাকে রাজসাক্ষী হওয়ার অনুমতি দেয়।