
আলোচনা কিংবা স্বীকৃতি ছাড়া চূড়ান্ত করা ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ মেনে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। আজ রোববার (৩ আগস্ট) রাজধানীর পুরানা পল্টনের আল রাজী কমপ্লেক্সে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অবস্থান জানায় সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, “২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে কোটা বিলুপ্ত হয়। কিন্তু চলতি বছরের ৫ জুন হাইকোর্টের এক রায়ে সেই পুরনো ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের সম্ভাবনায় ফের আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।”
তিনি বলেন, “কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে যখন গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে, তখন তা রূপ নেয় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনে। এই আন্দোলনে ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় এক ব্যতিক্রমী গণঅভ্যুত্থান।”
রাশেদ খান আরও বলেন, “এই গণঅভ্যুত্থান শুধু ৩৬ দিনের মধ্যেই ঘটেনি, বরং ১৪-১৫ বছরের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল এটি। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে ঘটে যাওয়া গণহত্যা দেশের আলেম ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করে। এরপর আসে ২০১৫ সালের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন এবং ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, যা ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে তরুণ সমাজকে দৃঢ় অবস্থানে নিয়ে আসে।”
তিনি বলেন, “২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, ‘আর কোনো কোটাই থাকবে না।’ এ ঘোষণাই প্রমাণ করে, আন্দোলন সরকারের ভিত্তি নাড়িয়ে দিয়েছিল।”
সেই সময়ের প্রসঙ্গ টেনে রাশেদ খান বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা সাহস পায়। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়ার মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে যেভাবে দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে, তা ছিল জনতার শক্তির বহিঃপ্রকাশ।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের তারিখ ও সময় ঠিক করলেও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কোনও পরামর্শ বা আলোচনা করেনি সরকার। বক্তারা বলেন, “যারা এই বিপ্লবের শরিক, তাদের বাদ দিয়ে ঘোষণাপত্র তৈরি করা হলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করব। জুলাই মাস কারও একার সম্পদ নয়—এটি আমাদের সবার। শুধুমাত্র একটি দলকে খুশি করতে তৈরি ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ইতিহাসকেও ১৯৭১ সালের ইতিহাসের মতো একতরফাভাবে কুক্ষিগত করবে। এটা হবে ‘জুলাই চেতনার’ পরিপন্থী।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ। উপস্থিত ছিলেন শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, জিলু খান, শাহ মুহাম্মদ সাগর, আখতারুজ্জামান সম্রাটসহ অনেকে।