
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, তিনি গত বছরের শুরুতে একজন ভারতীয় কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তবে বৈঠকটি গোপন রাখতে বলা হওয়ায় এটি প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়া তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত বিভিন্ন দলের সঙ্গে সমন্বয়ে ঐক্য সরকার গঠনের সম্ভাবনা দেখছে।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শফিকুর রহমান ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, “শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান বাংলাদেশের ও ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের সবার জন্য উন্মুক্ত হতে হবে। পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।” ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেনি, তবে তাদের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে ভারত বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে শফিকুর রহমান জানান, জামায়াত কোনো এক দেশের প্রতি একতরফা ঝুঁকতে চায় না, বরং সব দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা চাই।
ঢাকায় নিজ কার্যালয়ে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হলে জামায়াত এককভাবে নয়, বরং বিভিন্ন দলের সমন্বয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ গঠন করতে চায়। দলটি ইতিমধ্যেই কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও শুরু করেছে।
শফিকুর রহমান জানান, যে কোনো জাতীয় ঐকমত্য সরকারের মূল লক্ষ্য হবে দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং স্থিতিশীল শাসন। নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীকে সেই দল থেকে নেওয়া হবে যা সর্বাধিক আসনে জয়ী হবে। তবে জামায়াত এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে তার প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি দল নির্ধারণ করবে।
তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–এর সঙ্গে সম্ভাব্য জোট নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনার ধারা ইতিমধ্যেই চলছে। ১৭ বছর পর মূলধারার রাজনীতিতে ফেরার পর নির্বাচনে জামায়াত দ্বিতীয় অবস্থান অর্জন করতে পারে এবং বিএনপির সঙ্গে ব্যবধান খুব বেশি নাও হতে পারে।
ডা. শফিকুর রহমান উল্লেখ করেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের অংশীদার ছিল জামায়াত। ২০১৩ সালে নিবন্ধন হারানো এবং ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে পুনরায় বৈধতা পাওয়া দলটি বর্তমানে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। শফিকুর রহমান বলেন, “আওয়ামী লীগের সমর্থনে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির সঙ্গে জামায়াত অন্তর্ভুক্ত সরকার স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না।”
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আগেই জানিয়েছিলেন যে তিনি মেয়াদের মাঝপথে পদত্যাগে রাজি। তবে বুধবার রয়টার্সকে তিনি জানান, বিষয়টি জটিল করতে চান না এবং অতিরিক্ত মন্তব্য করবেন না।