
বরিশাল-১ আসনের জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী কামরুল ইসলাম খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ঘোষণায় জানান, তিনি নিজের ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, তার ছেলে শিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত না থাকা এবং প্রকাশ্যে জামায়াতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া। ফেসবুকে দেওয়া ওই পোস্ট ঘিরে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলায়। জানা যায়, ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির আয়োজনে গৌরনদী পাইলট স্কুল মাঠে এক সমাবেশ হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির। বরিশাল-১ আসনের বিএনপি প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপনের উপস্থিতিতেই কামরুল ইসলামের ছেলে আরাফাত বিল্লাহ খান বক্তৃতা দেন।
বক্তৃতায় আরাফাত বিল্লাহ বলেন, “আমার বাবা জামায়াত থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। আপনাদের কেউ যদি বলে, আপনি যে বিমানে উঠেছেন সেই বিমানের পাইলট ইউটিউব দেখে বিমান চালানো শিখেছেন, তাহলে আপনারা কি সেই বিমানে ভ্রমণ করবেন?” জনসভায় উপস্থিত লোকজন একসঙ্গে “না” বলে জবাব দেন। এরপর তিনি আরও বলেন, “কেন করবেন না? কারণ তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, কোনো এক্সপেরিয়েন্স নেই।”
এই বক্তব্যের পরই কামরুল ইসলাম খান নিজের ফেসবুক পেজে দুটি পোস্ট দেন। প্রথম পোস্টে তিনি লেখেন, “আমাকে পিতা পরিচয় দিয়ে গতকাল ৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখ গৌরনদী পাইলট স্কুল মাঠে বিএনপির পক্ষ নিয়ে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে তাতে কেউ হতাশ হবেন না। আমি আজ চিকিৎসা শেষে ঢাকা থেকে বাসায় ফিরে দুই উপজেলার আমির, আসন পরিচালক ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দদেরকে নিয়ে জরুরি বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব ইনশাআল্লাহ।”
পরের পোস্টে তিনি আরও লেখেন, “আমার বড় ছেলে আরাফাতকে শিবির করার জন্য অনেক বুঝিয়েছি, অনেক চাপ সৃষ্টি করেছি। আমি ব্যর্থ হয়েছি। তাকে দিয়ে শিবির করাতে পারিনি। আমি একজন ব্যর্থ পিতা। আমার বড় ছেলের সঙ্গে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করলাম জামায়াতে ইসলামীর নমিনির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার জন্য।”
পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় কামরুল ইসলাম জানান, “আমার ছেলের দেওয়া বক্তব্যে আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার প্রায় শেষের পথে। ছেলেটার বক্তৃতায় সব এলোমেলো হয়ে গেছে। বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। আমার পরিচয় দেওয়ার পরেই সে কথাটা বলেছে। এই কথাটা সে না বললেও পারতো।”
তিনি স্বীকার করেন, তার ছেলে দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং কেন্দ্রীয় কমিটির পদেও ছিলেন। কামরুল ইসলামের ভাষায়, “আমি জামায়াতের রাজনীতি করি। এজন্য আমার ছেলেও চাপে রয়েছে। কারণ এই খবর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও জানেন। আমার ইচ্ছা ছিল ছেলে শিবির করবে, আমার মতো জামায়াতের নেতা হবে। কিন্তু সে বিরোধী দলে রাজনীতি করে আমাকে রাজনৈতিক ও মানসিক চাপে ফেলেছে।”
অন্যদিকে, আরাফাত বিল্লাহ খান বলেন, তিনি ২৫ বছর ধরে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। “আমি আমার পার্টির প্রতি দায়িত্ববান। বাবা জামায়াত করেন এটা তার পছন্দের বিষয়, আমি বিএনপি করি এটা আমার পছন্দের বিষয়। বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক দেশ, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে আমাদের এই সুযোগটুকু দেওয়া উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “আমি ছাত্রদল-যুবদল করে অবশেষে বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত। খুব সচেতনভাবেই এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব উদারচিত্তের মানুষ। অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি বিদ্বেষ নেই। বাবা নমিনেশন পাওয়ার পর থেকেই জামায়াত-শিবিরের অনেকে আমাকে নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করছেন, যা সহজভাবে নেওয়ার মতো নয়।”