
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ–সাতকানিয়া আংশিক) আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকাকে ঘিরে নতুন করে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন আহমেদ।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) তিনি নিজেই মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। যদিও বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি, তবে দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে—ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী তালিকায় তার নাম রয়েছে।
মনোনয়নের খবর প্রকাশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জসিম উদ্দিন আহমেদের অতীত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার বিভিন্ন বক্তব্য ও ছবি, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক ও সমালোচনার জন্ম দেয়। ছবিগুলোতে তাকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখা যায়।
সূত্র অনুযায়ী, ২০২৪ সালের বিতর্কিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জসিম উদ্দিন আহমেদ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সে সময় একটি সভায় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘এই গাছবাড়িয়া ও চন্দনাইশ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগসহ দলমত নির্বিশেষে আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইনশাআল্লাহ আপনাদের সাথেই থাকব।’ ওই সভায় উপস্থিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘জসিম ভাই এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে’, ‘জসিম ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’—এ ধরনের স্লোগান দিলে তাকেও তাতে কণ্ঠ মেলাতে দেখা যায়।
অভিযোগ রয়েছে, জসিম উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং নগর যুবলীগ নেতা হেলাল উদ্দিন বাবর–এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এসব নেতার সঙ্গে তার একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই ব্যবসায়ী ‘জেসিকা গ্রুপ’–এর চেয়ারম্যান। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার পায়। এ ছাড়া তিনি সাবেক দুই পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ ও শহীদুল হক–এর ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথেও আমার ছবি আছে। আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। আমি সকলের দোয়া চাই।’ তবে আজীবন আওয়ামী লীগের পাশে থাকার বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শফিকুল ইসলাম রাহী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে লেখেন, ‘মানি ইজ পাওয়ার’। আরেকটি পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ‘চট্টগ্রাম-১৪তে প্রথমে এক আওয়ামী লীগের নেতাকে জেলা সদস্য করা হলো, অন্যদিকে আজ আওয়ামী দোসরকে সংসদে যাওয়ার মনোনয়ন দেওয়া হলো। জনগণ কি এটা সহজে মেনে নিচ্ছে? আমাদের ভাবমূর্তি কোন দিকে যাচ্ছে, ভেবে দেখার সময় কি আসেনি?’
এ প্রসঙ্গে শফিকুল ইসলাম রাহী বলেন, ‘বিএনপির ক্ষুদ্র কোনো কর্মী মনোনয়ন পেলেও আমি সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিতাম। দলের পক্ষ থেকে একজন আওয়ামী দোসরকে মনোনয়ন দেওয়ায় আমি খুবই হতাশ হয়েছি।’
আইনি দিক থেকেও জসিম উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার তথ্য রয়েছে। চট্টগ্রামের আলোচিত হৃদয় তরুয়া হত্যা মামলা ও জুলাইযোদ্ধা এমদাদকে গুলির মামলাসহ একাধিক মামলায় তিনি আসামি। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর বাড্ডায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত এক হত্যাচেষ্টা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে ১০ জুলাই পদ্মা ব্যাংকের ঋণখেলাপি মামলায় জসিম উদ্দিন ও তার স্ত্রী তানজিনা সুলতানা–কে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত। আরও আগে, ৩০ এপ্রিল একই মামলায় আদালত তাদের পাঁচ মাসের কারাদণ্ড দিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।