
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জাতির উদ্দেশে ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, “আমরা সকল বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজন করা হবে। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের মতো গণভোটও ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে একইদিনে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংস্কারের লক্ষ্য কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হবে না। নির্বাচন আরও উৎসবমুখর ও সাশ্রয়ী হবে। গণভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে উপযুক্ত সময়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে।”
তিনি জানান, জুলাই সনদের আলোকে গণভোটের ব্যালটে উপস্থাপনযোগ্য প্রশ্ন ইতোমধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি প্রশ্নটি পাঠ করে শোনান:
“আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?”
প্রশ্নটির চারটি মূল অংশে বলা হয়েছে -
ক) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠন করা হবে।
খ) আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট, যেখানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ থাকবে। সংবিধান সংশোধনের জন্য এই উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
গ) সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং স্থানীয় সরকারসহ ৩০টি বিষয়ে জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর যে ঐকমত্য হয়েছে, তা বিজয়ী দলগুলো বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে।
ঘ) জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাস্তবায়িত হবে।
ড. ইউনূস জানান, গণভোটের ব্যালটে এই চারটি প্রস্তাব একত্রে একটি প্রশ্নের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হবে, যেখানে ভোটাররা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে মতামত জানাতে পারবেন। যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। এই পরিষদের সদস্যরাই একইসঙ্গে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, পরিষদ গঠনের পর এর প্রথম অধিবেশন শুরু হওয়ার দিন থেকে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কারের কাজ শেষ করতে হবে। সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে, যা নিম্নকক্ষের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।