
স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সংসদভবন এলাকার জিয়া উদ্যানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়েছে।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে দাফন সম্পন্ন হয়। বড় ছেলে তারেক রহমান দাফন কার্যক্রমে অংশ নেন।
এ সময় কিছুটা দূরে উপস্থিত ছিলেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান, আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মীলা রহমান সিঁথিসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। পাশাপাশি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা দাফন প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ করেন।

এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে খালেদা জিয়ার মরদেহ জিয়া উদ্যানে নেওয়া হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধির কাছে পৌঁছানোর পর সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা কফিন কাঁধে নিয়ে কবরে নামান। এরপর ধর্মীয় বিধি মেনে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
এরও আগে, বেলা ৩টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ-জামান, বিএনপি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
জানাজার আগে তারেক রহমান মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চান এবং তার পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
দীর্ঘদিন গুরুতর অসুস্থতায় ভোগার পর খালেদা জিয়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদ্যন্ত্র ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি লন্ডনে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। তবে পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৩ নভেম্বর তাকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রায় দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
গৃহবধূ থেকে রাজনীতির শীর্ষে উঠে ৪৩ বছর ধরে বিএনপির নেতৃত্ব দেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৪ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পর তিনি পরিচিতি পান ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে এবং বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েন।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটে স্বামী জিয়াউর রহমানকে হারানোর বেদনা থেকে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান হত্যার পর সংকটে পড়ে বিএনপি। সেই সময় সাধারণ গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে দলের হাল ধরেন খালেদা জিয়া।
চার দশকের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তাকে কখনো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে দেখা যায়নি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি কখনো ব্যক্তিগত আক্রমণ করে কথা বলি না।”