
বিভিন্ন ক্যাডারের ১২ কর্মকর্তার সাময়িক বরখাস্তের প্রতিবাদে ও আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের দাবিতে রোববার (২ মার্চ) পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করবে ২৫টি ক্যাডারেরর সদস্যরা।
শনিবার (১ মার্চ) রাজধানীর খামারবাড়িস্থ কৃষি তথ্য সার্ভিসের সম্মেলন কক্ষে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সেবামূলক রাষ্ট্র গঠনে করণীয় বিষয়ে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সঙ্গে সাংবাদিকদের মত বিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়।
সভায় আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, ‘২৫ ক্যাডার কাল (রোববার) পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি ঘোষাণ করেছে। পরের এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যা সমাধান না হলে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো। তবে জরুরি সেবা কর্মবিরতির বাইরে থাকবে।’
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে মফিজুর রহমান বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনে ২৫টি ক্যাডারের পক্ষ থেকেই পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং উপসচিব পদে কোটা বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছিলো। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকেও সিভিল সার্ভিসে পেশাদারিত্বকে গুরুত্ব দেবার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। অথচ, জন দাবিকে উপেক্ষা করে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ক্ষমতাধর একটি গোষ্ঠীর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা আরও বৃদ্ধির প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে। এই রিপোর্ট পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে এবং প্রশাসনিক ফ্যাসিজম আরও শক্তিশালী হবে।’
সভায় বলা হয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডার বহির্ভূত করার প্রস্তাব হতে সরে এসে সুকৌশলে নিয়োগের প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা রাখা হয়েছে। যেন ধীরে ধীরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে মূলধারা থেকে বের করা যায়। এছাড়াও, পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারের বিষয় সংস্কার প্রস্তাবে না রাখা এবং পরিসংখ্যান ক্যাডারকে অযৌক্তিকভাবে সার্ভিসের বহির্ভূত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর ফলে এইসব সেক্টরে মেধাবীরা কম আকৃষ্ট হবে ও এসব সেক্টরসমূহ মেধাশূন্য হয়ে পড়বে।
প্রবন্ধে বলা হয়, কোনো ব্যক্তির মেধা যাচাইয়ের অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে গাণিতিক দক্ষতা। অথচ, গণিতকে বাদ দিয়ে অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে মুখস্ত করার প্রবণতাকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, যা যথাযথভাবে মেধা মূল্যায়নের অন্তরায়। এছাড়া বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ও জেলা পরিষদকে বিলুপ্ত করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি, বাস্তবতা বিবর্জিত প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থার প্রস্তাব জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের অন্তরায়।
সভায় পরিষদের পক্ষ থেকে কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় (ক্যাডার যার, মন্ত্রণালয় তার) বাস্তবায়ন, উপসচিব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ, সব ক্যাডারের সমতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারসহ সব ক্যাডারকে একই কমিশনের আওতায় রাখা, পরিবার পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান ক্যাডারকে সার্ভিসে অব্যাহত রাখা, সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিসে প্রবেশের পর শুধুমাত্র প্রশাসন ক্যাডারের জন্য পূর্বের সার্ভিসে ফেরার সুবিধার প্রস্তাব বাতিল, জেলা কমিশনারকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব প্রদানের প্রস্তাব বাতিল, ‘এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’-এর পরিবর্তে ‘ভূমি সার্ভিস’ বা ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা সার্ভিস’ নামকরণ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ‘মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়’ অথবা ‘সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়’ হিসেবে নামকরণসহ বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
সভায় জানানো হয়, সম্প্রতি ফেসবুকে লেখালেখির মত তুচ্ছ কারণে ২৫ ক্যাডারের ১৩ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই ধরনের কাজ প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বৈষম্যপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে প্রশাসন ক্যাডার ২৫ ক্যাডারের কার্যক্রমকে বাঁধাগ্রস্ত করতে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। প্রশাসন ক্যাডার কর্তৃক পক্ষপাতিত্বপূর্ণভাবে বিভিন্ন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্তের প্রতিবাদে এবং আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের দাবিতে ২ মার্চ পরিষদভুক্ত সকল ক্যাডার পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করবে। ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কর্মকর্তারা নিজ নিজ দপ্তরের সামনে কালো ব্যাজ পরে ব্যানারসহ অবস্থান করবেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক কৃষিবিদ মো. আরিফ হোসেন। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
বৈষম্যবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদ গঠন, দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ: ২৫ ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত হযেছে ‘বৈষম্যবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদ’। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) পরিষদের আত্মপ্রকাশের সময় বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের প্রশাসন ক্যাডার ব্যতীত বিভিন্ন ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নবগঠিত পরিষদের সমন্বযক কৃষিবিদ আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানান।
পরিষদের আত্মপ্রকাশের পর শনিবার কেআইবিতে তাদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রফেসর মো. আব্দুস সামাদের সভাপতিত্বে সভায় আলোচকরা জনপ্রশাসনের কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার জন্য আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের বিভিন্ন পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন। পাশাপাশি, রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের পরিবর্তে প্রশাসন ক্যাডারকে অধিক সুবিধা প্রদানের সুপারিশ সম্বলিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের রিপোর্টকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এছাড়া, প্রশাসন ক্যাডারের বিভিন্ন সদস্য কর্তৃক জনপ্রশাসন মন্ত্রণলায়ে বিশৃঙ্খলা, সমাবেশ করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানকে আল্টিমেটাম দেওয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্য ২৫ ক্যাডারের সদস্যদেরকে অশ্রাব্য ভাষায় আক্রমণের পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় নিন্দা প্রকাশ করা হয়। এসময় বিভিন্ন পর্যায়ের বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডার বাদে অন্যান্য ক্যাডারের সঙ্গে যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে, তার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। এই বৈষম্য দূরীকরণে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানানো হয়।
পাশাপাশি, বৈষম্যমূলকভাবে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্তের প্রতিবাদে ও আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের দাবিতে রোববার পূর্ণদিবস কর্মবিরতির সঙ্গেও একাত্মতা প্রকাশ করা হয়। এই দাবিতে 'বৈষমাবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদ' খামারবাড়িতে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কালো ব্যাজ ধারণ করে মানববন্ধন করবেন এবং সারাদেশে অবস্থানরত ২৫ ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণকে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একই সময়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের সাথে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।