
সদ্য প্রকাশিত ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিবছরের মতো এবারও একটি ভর্তি নীতিমালা প্রণয়নের পথে রয়েছে।
ইতোমধ্যে একটি খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
সবচেয়ে আলোচিত পরিবর্তন হতে পারে কোটাব্যবস্থায়। খসড়া নীতিমালায় প্রথমবারের মতো যুক্ত হতে যাচ্ছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোটা’। এতে ২০২৪ সালের ২৪ জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে আহত কিংবা শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ সুবিধা সংরক্ষণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, যারা আন্দোলনে আহত অবস্থায় পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন অথবা যাদের পরিবারের সদস্যরা শহীদ হয়েছেন, তাদের জন্য এই কোটা সাময়িকভাবে চালু করা হতে পারে—সম্ভাব্যত দুই থেকে তিন বছরের জন্য।
অন্যদিকে, দীর্ঘদিন চালু থাকা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। শিক্ষা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, স্বাধীনতার প্রায় ৫৫ বছর পর এসে কলেজে মুক্তিযোদ্ধা কোটার আর প্রয়োজনীয়তা নেই। ২০২৪ সালের উচ্চ আদালতের রায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের কোটাও বাতিল হওয়ায়, কলেজ পর্যায়ে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ কোটার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেক কলেজে সংরক্ষিত এই আসনগুলো খালি থেকে যাচ্ছে।
বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী, একাদশ শ্রেণিতে ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হয় মেধাক্রমে, আর বাকি ৭ শতাংশ ভর্তি করা হয় বিভিন্ন কোটায়। এর মধ্যে ৫ শতাংশ রাখা হয় মুক্তিযোদ্ধা কোটার জন্য এবং ২ শতাংশ সংরক্ষিত থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য। তবে এই ৭ শতাংশ কোটা পুরোপুরি বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের দুই কর্মকর্তা। তাদের মতে, পোষ্য কোটা ও মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের সন্তানের কোটা নিয়েও রয়েছে সমালোচনা।
একজন বোর্ড পর্যবেক্ষক জানান, স্কুলে ভর্তির সময় ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ অংশগ্রহণকারীদের জন্য প্রতিটি শ্রেণিতে একটি করে অতিরিক্ত আসন সংরক্ষণের নিয়ম চালু ছিল। কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রেও একই ধারা অনুসরণ করা হবে কি না, তা নির্ভর করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপর।
চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাস করেছেন ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী। বিপরীতে সারাদেশে ৯ হাজার ১৮১টি কলেজ ও আলিম মাদরাসায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অনুমোদিত আসন রয়েছে প্রায় ২২ লাখ। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিকে রয়েছে আরও ২ লাখ ৪১ হাজার এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে প্রায় ৯ লাখ আসনসহ মোট আসনের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩৩ লাখ। ফলে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের সবাই ভর্তি হলেও আসন শূন্য থাকবে প্রায় ২০ লাখের বেশি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, “কলেজে আসন সংকট হবে না। তবে সমস্যা হলো—শিক্ষার্থীরা হাতেগোনা কয়েকটি কলেজে ভর্তি হতে চায়। এতে প্রতিযোগিতা বাড়ে, আবার অনেক কলেজ শিক্ষার্থী পায় না। আমরা চেষ্টা করছি, সব কলেজে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে। যেসব কলেজে পাঠদানের মান ভালো নয় কিংবা শিক্ষার্থী পাচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের অনুমোদন বাতিল করা হবে।”
আগামী ১৩ জুলাই রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত নীতিমালা অনুমোদনের লক্ষ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই নির্ধারিত হবে—চলতি শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালায় কোটাব্যবস্থার চূড়ান্ত রূপরেখা।