
গাজায় প্রতিনিয়ত চালানো বোমা হামলা, খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তায় বাধা এবং অপুষ্টি—এই সব মিলে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে গড়ে ২৮ শিশু। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এমন ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে।
মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে ইউনিসেফ জানায়, "এ ধরনের মৃত্যু ঘটছে বোমা হামলা, অপুষ্টি, ক্ষুধা এবং জরুরি চিকিৎসাসেবার অভাবে।" সংস্থাটি আরও জানায়, প্রতিদিন গাজায় যে সংখ্যক শিশু মারা যাচ্ছে, তা একটি গড় শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার্থীর সংখ্যার সমান।
বর্তমানে গাজার শিশুদের বেঁচে থাকার জন্য জরুরি ভিত্তিতে দরকার নিরাপদ খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং নিরাপত্তা। তবে সবচেয়ে জরুরি হলো—একটি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি।
ইউনিসেফের ভাষ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গাজায় ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে ১৮ হাজারের বেশি শিশু। এর মানে, প্রতি ঘণ্টায় মারা যাচ্ছে অন্তত একজন শিশু।
এই পরিস্থিতির প্রতিফলন দেখা যায় আল জাজিরার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনেও। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে গাজায় মোট প্রাণহানি ঘটেছে ৬০ হাজার ৯৩৩ জনের। শুধুমাত্র গত ২৪ ঘণ্টায় এক শিশুসহ নিহত হয়েছেন ৮ জন। এছাড়া, ইসরায়েলের বাধার কারণে বন্ধ থাকা মানবিক সহায়তার ফলে অনাহারে মারা গেছে ৯৪ শিশুসহ মোট ১৮৮ জন।
‘গাজা হয়ে উঠেছে শিশুদের কবরস্থান’
গাজার শিশুদের ওপর ইসরায়েলি হামলার মানসিক প্রভাবও মারাত্মক। বাস্তুচ্যুত একটি পরিবারের ১০ বছর বয়সী মেয়ে লানা, যার চুল ও ত্বকের অনেক অংশ সাদাটে হয়ে গেছে। চিকিৎসকদের মতে, সে "ট্রমা-ইনডিউসড ডিপিগমেন্টেশন" নামক এক ধরণের মানসিক আঘাতজনিত রোগে ভুগছে, যার ফলে ত্বকে মেলানিন কমে গিয়ে এমন রঙ ধারণ করে।
এই ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে সেভ দ্য চিলড্রেনের আঞ্চলিক পরিচালক আহমাদ আলহেনদাওয়ি বলেন, "গাজা এখন শিশুদের জন্য একটি কবরস্থান হয়ে উঠছে। শিশুরা স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা হারাচ্ছে। বর্তমান প্রজন্মের মনে হচ্ছে, পৃথিবীর মানুষ তাদের ভুলে গেছে।"