আগামী ১ জানুয়ারি থেকে পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে শুরু হতে যাচ্ছে ৩০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ)-২০২৬। মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) মেলার আয়োজন সম্পর্কিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইপিবি ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ, অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) আব্দুর রহিম খান এবং ইপিবির মহাপরিচালক বেবি রাণী কর্মকার।
বাণিজ্য সচিব জানান, এবারের মেলাতে বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টল ও প্যাভিলিয়ন অনলাইনে বরাদ্দ করা হয়েছে। দর্শনার্থীরা অনলাইনে ই-টিকিট ক্রয় করে কিউআর কোড স্ক্যানের মাধ্যমে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।
যাতায়াতের সুবিধার জন্য বিআরটিসির ডেডিকেটেড বাস সার্ভিস ছাড়াও ‘পাঠাও’ কনসেশনাল সার্ভিস যুক্ত করা হয়েছে।
মেলায় ‘Export Enclave’ নির্মাণ করা হয়েছে, যা রপ্তানি খাতের সক্ষমতা ও কার্যক্রম প্রদর্শন করবে। বাংলাদেশ স্কয়ারে স্থাপন করা হবে ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪-এর জুলাই আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের স্মরণে স্থিরচিত্র প্রদর্শন। পাশাপাশি সম্ভাবনাময় সেক্টরভিত্তিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
বিদেশি উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে মেলায় থাকছে ইলেকট্রনিক্স ও ফার্নিচার জোন। সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য সিটিং কর্নার, শিশুদের জন্য ২টি শিশু পার্ক, উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং মহিলা, প্রতিবন্ধী ও হস্তশিল্পীদের জন্য সংরক্ষিত স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ সচেতনায় পলিথিন ব্যাগ ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ থাকবে। পরিবর্তে হ্রাসমূল্যে বস্ত্র ও পাটের পরিবেশবান্ধব শপিং ব্যাগ সরবরাহ করা হবে।
মেলার লে-আউট অনুযায়ী মোট ৩২৪টি প্যাভিলিয়ন/স্টল/রেস্টুরেন্ট থাকবে, যা দেশীয় উৎপাদক, রপ্তানিকারক ও সাধারণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রদর্শিত পণ্যের মধ্যে থাকছে বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স, ফার্নিচার, পাটজাত পণ্য, গৃহসামগ্রী, চামড়া ও জুতা, স্পোর্টস গুডস, খেলনা, স্টেশনারি, প্লাস্টিক, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও হোম ডেকর।
মেলার সেন্টার পরিকল্পনায় দক্ষিণ-পূর্বে বাংলাদেশ স্কয়ার, দক্ষিণ-পশ্চিমে কালচারাল সেন্টার ও রিক্রিয়েশনাল কর্নার, উত্তর-পূর্বে ২টি শিশু পার্ক, উত্তর-পশ্চিমে মসজিদ/নামাজঘর স্থাপন করা হয়েছে।
ব্যাংকিং সুবিধার জন্য পর্যাপ্ত এটিএম বুথ থাকবে। মা ও শিশু কেন্দ্র, রক্ত সংগ্রহ কেন্দ্র, দর্শনার্থীদের বিশ্রাম ও আরামদায়ক চেয়ার, সিনিয়র সিটিজেনদের সিটিং কর্নারসহ অন্যান্য সেবারও বন্দোবস্ত রয়েছে।
মেলার দর্শনার্থীদের যাতায়াত সহজ করতে কুড়িল বিশ্বরোড, ফার্মগেট, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিআরটিসির ২০০টির বেশি ডেডিকেটেড শাটল বাস চলবে। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকা থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে। এছাড়া পাঠাও অ্যাপসের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে যাত্রা করার সুযোগ থাকবে।
মেলার প্রবেশ টিকিট যথাক্রমে: প্রাপ্তবয়স্ক ৫০ টাকা, শিশু (১২ বছরের কম) ২৫ টাকা। মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী ও জুলাই আহতরা বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারবেন। মেলা চলবে সকাল ৯:৫৫ থেকে রাত ৯:৫০ পর্যন্ত, সপ্তাহান্তে রাত ১০টা পর্যন্ত।
মেলা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশীয় পণ্যের প্রচার ও বিপণন, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এ মেলা ১৯৯৫ সাল থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে প্রতি বছর আয়োজন করা হচ্ছে।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মেলায় পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা এবং প্রাইভেট সিকিউরিটি নিয়োজিত থাকবে। সিসিটিভি, আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর এবং ফায়ার ব্রিগেড সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য ২০০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োজিত থাকবেন। মেলায় খাদ্য মান নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে। এছাড়া ৫০০ আসন বিশিষ্ট ক্যাফেটেরিয়া, পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা এবং তথ্য কেন্দ্র থাকবে।
মেলাসংক্রান্ত তথ্য ও সহায়তার জন্য যোগাযোগ:
মোঃ কামাল হোসেন, সিনিয়র তথ্য অফিসার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
মোবাইল: ০১৮৩১১১৭৭৭৭
ইমেইল: [email protected]