
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও উন্নত করতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রেস উইং আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও সুধীজনরা অংশ নেন।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়, তখন সার্বিক পরিস্থিতি ছিল অস্থির। সেই অবস্থাকে স্বাভাবিক করার জন্য সরকার টানা কাজ করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনায় পুলিশ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন, অপরাধীদের কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরও জানান, সরকার একটি অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে চায়, যেখানে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারবে এবং সন্তুষ্টি প্রকাশ করবে।
সভার এক পর্যায়ে এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার শ. ম. সাজু বলেন, পূর্বের নির্বাচনগুলোতে সাংবাদিকরা প্রার্থীদের বাধা ও নিরাপত্তা বাহিনীর চাপের মুখে পড়েছেন। অনেক সময় তথ্য হাতে থাকা সত্ত্বেও তা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। তিনি চান, এবারের নির্বাচনে অনিয়মগুলো লাইভ কাভার করার সুযোগ থাকুক।
উত্তরে উপ-প্রেস সচিব বলেন, অতীত তিনটি নির্বাচনকে প্রকৃত নির্বাচন বলা যায় না, কারণ সেখানে জনগণের প্রকৃত অংশগ্রহণ ছিল অনুপস্থিত। এবারের নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি জানান, ৪৭ হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্রে প্রশিক্ষিত পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। সাংবাদিকদের হয়রানিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য একজন নির্দিষ্ট কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকবেন।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত এক বছরে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূচকে ১৬ ধাপ উন্নতি করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে, এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা হয়রানিমূলক মামলাগুলোর অনেকগুলোই প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ভবিষ্যতেও গণমাধ্যম কর্মীরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন।
সভায় অংশ নিয়ে নদী গবেষক ড. মাহবুব সিদ্দিকী রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর স্থাপনের মাধ্যমে বরেন্দ্র অঞ্চলের বিখ্যাত আম ও পান বিদেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরির দাবি জানান। পাশাপাশি জ্বালানি ব্যবসায়ীরা একটি পূর্ণাঙ্গ জ্বালানি তেলের ডিপো স্থাপনের দাবি তোলেন।
উত্তরে আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাপান সফরের সময়ও রাজশাহীর আম রপ্তানি বিষয়ে আলোচনা করেছেন। অন্যান্য প্রস্তাবগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে যাচাই-বাছাই করা হবে।
সভায় রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ, সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মির্জা ইমামসহ অন্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।