
আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যেই ‘জাতীয় জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্পষ্টভাবে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আশা করি, সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্ত সব রাজনৈতিক দল মেনে নেবে।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত ‘আইন সহায়তা প্রদান অধ্যাদেশ সংশোধন’ বিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে আমাদের একটা ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবেন—এ রকম প্রত্যাশা আমরা করেছিলাম। কিন্তু প্রত্যাশা করেই আমরা বসে থাকিনি। আমরা নিজেদের মতো কাজ করেছি। সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, তা আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যেই পরিষ্কারভাবে জানতে পারবেন।”
তিনি আরও জানান, উপদেষ্টা পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। “সব দলের প্রত্যাশার প্রতি সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের ও জনগণের স্বার্থে যা করা দরকার, সেটাই আমরা করতে যাচ্ছি,” বলেন তিনি।
এদিনের সভায় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পক্ষ থেকে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সংস্থাটিকে অধিদপ্তরে রূপান্তরের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে এর কার্যপরিধি আরও বিস্তৃত হয় এবং আইনগত সহায়তা কার্যক্রমকে শক্তিশালী করা যায়।
খসড়ায় অধিদপ্তরের দায়িত্ব ও কার্যাবলী নির্ধারণ, আইনগত সহায়তা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন, মহানগর কমিটি প্রতিষ্ঠা, বেসরকারি সংস্থার কার্যক্ষেত্র নির্ধারণ এবং মধ্যস্থতাকারীদের অ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেট প্রদানের মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা, সাবেক জেলা জজ মোতাহার হোসেন, ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, এবং স্পেশাল কনসালটেন্ট ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওনসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। তাঁরা প্রস্তাবিত আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে গঠনমূলক পরামর্শ দেন।
সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে চলমান বিতর্কের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, “রাতারাতি সব সংস্কার শেষ করা সম্ভব নয়। বাস্তবে এত বড় ধরনের সংস্কার করা সহজসাধ্য নয়। ক্রমান্বয়ে সংস্কার করলে ভালো জায়গায় পৌঁছাতে পারব।”
তিনি আরও যোগ করেন, “সবাই মনে করেন সব সংস্কার এখনই করে ফেলতে হবে। বিষয়টা এত সহজ নয়। আমরা যখন অ্যাকটিভিজম করেছি তখন ভেবেছি কত সহজ, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি কত কঠিন।”
সংবিধান বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “সংবিধান কোনো ম্যাজিক নয়, যে লিখে দিলেই সমাধান হয়ে গেল। রাজনৈতিক সংস্কৃতি, জনগণের অভ্যাস বাদ না দিলে কোনো কিছু পরিবর্তন হবে না।”
সংবিধানের ব্যর্থতার উদাহরণ টেনে আইন উপদেষ্টা বলেন, “সংবিধানে তো লেখা আছে রাষ্ট্রপতি স্বাধীনভাবে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। কখনো কি হয়েছে?”
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের কাজ প্রসঙ্গে তিনি জানান, “বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের দেওয়া ৭০-৮০ ভাগ সংস্কার প্রস্তাব ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। অথচ অপপ্রচার করে বলা হয় কোথায় সংস্কার, কোথায় সংস্কার?”
ভবিষ্যতের সরকারকে সংস্কার অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের একটা ভীতি কাজ করে যে নির্বাচিত সরকার আসবে তারা এটা ধরে রাখবে কি না। যারা আসবেন, তাদের কাছে অনুরোধ—সংস্কারগুলো ধরে রাখবেন, আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাবেন।”