
দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ও অযাচিত ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বাড়াচ্ছে। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর সাম্প্রতিক জাতীয় জরিপে দেখা গেছে, দেশের আইসিইউতে ভর্তি ৪১ শতাংশ রোগীর শরীরে কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কার্যকর হচ্ছে না। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এই পরিস্থিতিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে আইইডিসিআরের নতুন ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের উপস্থাপনা করেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন হাবিব।
জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত পরিচালিত কেস-ভিত্তিক নজরদারি জরিপে ৯৬ হাজারের বেশি রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পাঁচটি আইসিইউ থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা করা হলে ৭১ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীর শরীরে কোনো ওষুধ কার্যকর হয়নি।
অধ্যাপক হাবিব বলেন, “যথেচ্ছভাবে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো জীবাণুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াচ্ছে। এই এএমআর এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় সংকট।” তিনি সবাইকে সতর্ক করে বলেন, “সেভ অ্যান্টিবায়োটিক, সেভ ইয়োরসেলফ।”
জরিপে দেখা গেছে, দেশে ব্যবহৃত মোট অ্যান্টিবায়োটিকের ৫৭ শতাংশ ঢাকায় ব্যবহার হয়। বিশেষায়িত হাসপাতাল ও রোগীর চাপ বেশি থাকায় রাজধানীতে এই হার তুলনামূলকভাবে বেশি। ঢাকার পরে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেটের অবস্থান।
ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই)-এ আক্রান্ত রোগীদের মধ্যেও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রবণতা বেশি।
জরিপে দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক হলো: সেফট্রিয়াক্সন, সেফিক্সিম, মেরোপেনেম, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, আজিথ্রোমাইসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, মেট্রোনিডাজল, ক্লক্সাসিলিন, পিপেরাসিলিন-ট্যাজোব্যাকটাম এবং ভ্যানকোমাইসিন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে।
আইইডিসিআর জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অগ্রাধিকার-প্রাপ্ত জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ দ্রুত বাড়ছে।
কার্বাপেনেম-রেজিস্ট্যান্ট এন্টারোব্যাকটেরিয়াসি (CRE): অনেক ক্ষেত্রে প্রতিরোধের হার ৫০–৭০ শতাংশ।
মেথিসিলিন-রেজিস্ট্যান্ট স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস (MRSA): ধারাবাহিকভাবে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অযাচিত অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন, প্রাণিসম্পদ খাতে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতা এ সংকটকে আরও গভীর করছে। এই নিয়ন্ত্রণ না আনলে সাধারণ সংক্রমণও ভবিষ্যতে প্রাণঘাতী হতে পারে।