
প্রযুক্তির জগতে নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া ও ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্বয়ংক্রিয় ও প্রোগ্রামযোগ্য রোবট উদ্ভাবনের দাবি করেছেন, যার আকার অণুজীবের কাছাকাছি।
গবেষকদের তথ্যমতে, এই অতিক্ষুদ্র রোবটগুলোর মাপ মাত্র ০.২ x ০.৩ x ০.০৫ মিলিমিটার—যা একটি বালুকণার চেয়েও ছোট এবং খালি চোখে দেখা প্রায় অসম্ভব।
বিজ্ঞানীরা জানান, রোবটগুলো স্বতন্ত্রভাবে চলাচল করতে পারে, আশপাশের পরিবেশের পরিবর্তন শনাক্ত করতে সক্ষম এবং প্রয়োজন হলে নিজের ক্ষত নিজেই সারিয়ে নিতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞান ও সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি নির্মাণে এই উদ্ভাবন বড় ধরনের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষকদের মতে, এই রোবটগুলোর অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য হলো আলো ব্যবহার করে শক্তি সংগ্রহ ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা। প্রতিটি রোবটের জন্য আলাদা পরিচয় নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে হাজারো রোবটের মধ্য থেকেও নির্দিষ্ট কোনো রোবটকে আলাদা করে নির্দেশ দেওয়া সম্ভব।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মার্ক মিসকিন জানিয়েছেন, প্রচলিত প্রযুক্তির তুলনায় প্রায় ১০ হাজার গুণ ছোট স্বয়ংক্রিয় রোবট তৈরি করতে তারা সফল হয়েছেন। তিনি বলেন, পানির নিচে চলার সময় এসব রোবট মাছের ঝাঁকের মতো দলবদ্ধভাবে কাজ করে এবং যান্ত্রিক নড়াচড়ার কোনো অংশ না থাকায় এগুলো দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই।
রোবটের ‘মস্তিষ্ক’ হিসেবে ব্যবহৃত অতি ক্ষুদ্র মাইক্রো-কম্পিউটারটি তৈরি করা হয়েছে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড ব্লাউ ও ডেনিস সিলভেস্টারের ল্যাবে। এই কম্পিউটার চালু রাখতে প্রয়োজন হয় মাত্র ৭৫ ন্যানোওয়াট বিদ্যুৎ, যা একটি স্মার্ট ওয়াচে ব্যবহৃত শক্তির তুলনায় প্রায় এক লাখ গুণ কম।
এই অল্প শক্তি সংগ্রহের জন্য রোবটের অধিকাংশ অংশজুড়ে বসানো হয়েছে ক্ষুদ্র সোলার প্যানেল। অতিক্ষুদ্র পরিসরে পানির সান্দ্রতার কারণে চলাচল কঠিন হলেও বিজ্ঞানীরা একটি বিশেষ বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করে সেই বাধা অতিক্রম করেছেন। এতে রোবটগুলো নিজেরা সরাসরি নড়াচড়া না করে আশপাশের পানির অণুগুলোকে ঠেলে সামনে এগিয়ে যায়।
ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে পরিচালিত এই গবেষণার ফলাফল ইতোমধ্যে ‘সায়েন্স রোবটিক্স’ ও ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকদের হিসাবে, প্রতিটি রোবট তৈরিতে খরচ পড়বে প্রায় এক পয়সার সমান।
কম খরচ ও অতি ক্ষুদ্র আকারের কারণে ভবিষ্যতে এসব রোবট মানবদেহের রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করিয়ে কোষ পর্যায়ে স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ কিংবা নির্ভুলভাবে ওষুধ সরবরাহে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এসব রোবট মাসের পর মাস কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে।
সূত্র: এনডিটিভি