
ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির মালিকানা নিয়ে আদালতে নতুন তথ্য দিয়েছেন আসামি মো. কবির। কবির দাবি করেন, মোটরসাইকেলটি তার বন্ধু মাইনুদ্দিন ইসলাম শুভ কিনেছেন। তবে কেনার সময় তার জাতীয় পরিচয়পত্রটি ব্যবহার করা হয়েছিল।
মঙ্গলবার ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুজ্জামানের আদালতে হাজির করা হলে কবির এসব তথ্য জানান। এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ কবিরের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন।
রিমান্ড শুনানিতে তদন্ত কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ আদালতকে জানান, হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির মালিক কবির এবং যানটি সরবরাহের মাধ্যমে তিনি অপরাধে সহযোগিতা করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষে রিমান্ডের আবেদন সমর্থন করেন আইনজীবী কাইয়ুম হোসেন নয়ন। তবে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।
শুনানির একপর্যায়ে কবির আদালতে বলেন, তিনি ও তার বন্ধু শুভ একই দিনে মোটরসাইকেল কিনতে যান। সে সময় শুভ তার পরিচয়পত্র ব্যবহার করে মোটরসাইকেলটি কেনেন। তবে মোটরসাইকেলের অন্যান্য কাগজপত্র শুভর নামেই রয়েছে এবং সেটি অনেক আগেই কেনা হয়েছিল বলে তিনি দাবি করেন।
কবির আরও জানান, তিনি আগে উবার চালাতেন এবং মাঝেমধ্যে ফয়সাল করিম মাসুদ তাকে ফোন করে গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের জন্য ডাকতেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৮ থেকে ২০ দিন আগে ফয়সাল তাকে ফোন করে হাদির অফিসে নিয়ে যেতে বলেন এবং তিনি সেখানে যান।
এর আগে সোমবার ১৫ ডিসেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকা থেকে র্যাব হত্যাচেষ্টা মামলার মূল অভিযুক্ত ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সন্দেহে কবির ওরফে মো. কবিরকে গ্রেপ্তার করে।
এই ঘটনার ধারাবাহিকতায় রোববার ১৪ ডিসেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে র্যাব ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সামিয়া, বান্ধবী মারিয়া এবং শ্যালক শিপুকে আটক করে। পরদিন সোমবার তাদের আদালতে হাজির করা হলে তদন্ত কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালত প্রত্যেকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
হাদিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে রোববার ১৪ ডিসেম্বর পল্টন থানায় ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, হত্যাচেষ্টা, বিপজ্জনক অস্ত্র ব্যবহার করে স্বেচ্ছায় গুরুতর আঘাত এবং দুষ্কর্মে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল দাউদসহ ৩৭ জন অজ্ঞাতনামা আসামি তৎকালীন সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অভিযোগে বলা হয়, তারা হত্যা, গুম ও খুনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান দমন করতে চেয়েছিল। তবে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে গণমানুষের অংশগ্রহণে সেই স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত শরিফ ওসমান হাদি ৩৩ ওই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করে মুখপাত্রের দায়িত্ব নেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন বক্তব্য দেন। এর জেরে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের বিরোধিতার মুখে পড়েন এবং একাধিকবার হত্যার হুমকি পান বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই শরিফ ওসমান হাদি ঢাকা ৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন। এর ধারাবাহিকতায় গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে মতিঝিল মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে প্রচারণা শেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ার পথে পল্টন থানাধীন বক্স কালভার্ট রোডে তাকে বহনকারী অটোরিকশায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে পালিয়ে যায়।
হামলার পর সোমবার ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য শরিফ ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। তার সঙ্গে গেছেন ভাই ওমর বিন হাদি এবং বন্ধু আমিনুল হাসান ফয়সাল।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ১২ ডিসেম্বর দুপুরে পল্টন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর প্রথমে ওসমান হাদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে পরিবারের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন।