রাজনীতিকীকরণ সাংবাদিকদের অধিকারহীনতার উৎস: তথ্য উপদেষ্টা


4-1746451298.jpg

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম মন্তব্য করে বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে সংবাদমাধ্যমে যে ধরনের ‘রাজনীতিকীকরণ হয়েছে’, সেটিই মূলত সাংবাদিকদের ‘অধিকারহীনতার উৎস’।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঘটা হত্যা, গুম, খুনের জন্য ‘সম্মতি উৎপাদনের যন্ত্র হিসেবে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করা হয়েছে’।

সোমবার (৫ মে) রাজধানীর সার্কিট হাউজ রোডে ডিএফপির সভাকক্ষে ‘ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সাংবাদিক হত্যা-নিপীড়ন’ শীর্ষক এক সেমিনারে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহফুজ বলেন, “শেখ হাসিনার পৈশাচিকতার সম্মতি উৎপাদনের যন্ত্র ছিল গণমাধ্যম। এবং গণমাধ্যমের রাজনীতিকীকরণই মূলত সাংবাদিকদের শত্রু। সাংবাদিকদের এই কথাটা গুরুত্ব দিয়ে বোঝা উচিত সংবাদমাধ্যমগুলোর যে রাজনীতিকরণ হয়েছে, এটাই মূলত সাংবাদিকদের অধিকারহীনতার উৎস।

“এই যে মানুষকে হত্যা করা, নির্বিচারে গুম, খুন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা এসব ঘটনা ঘটানোর জন্য সম্মতি উৎপাদনের জন্য গণমাধ্যমকে দরকার ছিল এবং গণমাধ্যম তৈরি করা হয়েছিল এই উদ্দেশ্যে।”

তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুমোদন পাওয়া সংবাদমাধ্যমগুলোকে তদন্তের আওতায় আনা হবে।

তিনি বলেন, “কিভাবে ওই গণমাধ্যমগুলোর লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল, আমরা ওগুলোর খুব শিগগিরই তদন্ত করব। কখন, কিভাবে এদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং এই অনুমোদনের ভিত্তিতে এরা কিভাবে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং কিভাবে ভুয়া সাংবাদিক তৈরি করেছে।”

মাহফুজ বলেন, “আপনি যদি একটি ইতিবাচক প্রতিযোগিতা, মানসম্পন্ন এবং পেশাদারিত্ব তৈরি করতে চান, আপনাকে ব্যাড অ্যাপলগুলো বাদ দিতে হবে। এবং গুড অ্যাপলগুলো বাদ দিতে হবে।”

পেশাদার পত্রিকাগুলোর জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হবে জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “যাদের পত্রিকা বিক্রি হয়, তাদের জন্য সুযোগ বাড়াতে হবে। তাদের জন্য আমরা পত্রিকার সার্কুলেশনের ভিত্তিতে ডিএফপির যে সুবিধা আছে সেগুলো বাড়ানোর চেষ্টা করব। বিজ্ঞাপনের হার বাড়াব। যাতে পজিটিভ মিডিয়া হবে। প্রফেশনাল মিডিয়া হবে।”

সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই না এই সরকারের পক্ষে আপনারা লেখেন। সরকারকে প্রশ্ন করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সরকারকে প্রশ্ন করলে সরকার আরও বেশি কাজ করে। কিন্তু পেশাদারিত্বে জায়গা থেকে প্রশ্ন করা এক জিনিস, কিন্তু সাংবাদিকতাটাকে একটা দলের আদর্শের প্রোপাগাণ্ডা হিসেবে ব্যবহার করা আলাদা জিনিস।

তিনি আরও বলেন, “অবশ্যই এখানে মব ভায়োলেন্স হয়েছে এবং আমরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। কোনো সংবাদমাধ্যমে আজ পর্যন্ত কোনো আঘাত করতে দেওয়া হয় নাই এবং সামনেও করতে দেওয়া হবে না।”

হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হবে জানিয়ে মাহফুজ বলেন, “২৬৬টা মামলার কথা বলা হল। কিন্তু আমি শুধু জানতে চাই গত ১৫ বছরে কয়েক হাজার মামলা হল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে, কয়জন সম্পাদক লিখেছেন? কয়টা সম্পাদকীয় বের হয়েছে, কয়টা রিপোর্ট বের হয়েছে, আমরা দেখব। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে।’’

হয়রানিমূলক মামলা হলে সেগুলো পর্যালোচনা করে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক কল্যান ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ ৪৪ ধাপ পিছিয়েছে। ২০০৯ সালের পর ২০১৬ সাল ছাড়া কখনোই বাংলাদেশ গণমাধ্যমসূচকে উন্নতি করতে পারেনি। ফ্যাসিবাদী শাসনামলে গোটা সংবাদমাধ্যম জুড়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করে। ১৫ বছরে ৬১ জন সাংবাদিক খুন হন। প্রতি মাসে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন সংবাদকর্মী হামলা, মামলা, হুমকি, হেনস্তার মুখে পড়েন।”

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষ্যে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, দৈনিক সংগ্রামের সাবেক সম্পাদক আবুল আসাদ, সাংবাদিক শফিক রেহমান, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×