
হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একদিন প্রকাশনা বন্ধ থাকার পর আজ আবার ছাপা হয়েছে দেশের শীর্ষ দুই সংবাদপত্র- দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার। সংবাদপত্রের নির্ধারিত ছুটি ছাড়া এই প্রথমবারের মতো পত্রিকা দুটির প্রকাশনায় এমন বিরতি এলো।
একদিন বন্ধ থাকার পর শনিবার দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত হয়েছে, পত্রিকাটির প্রথম পৃষ্ঠায় বড় আকারে শিরোনাম ছিল- Unbowed, অর্থাৎ ‘অদমিত’ বা ‘মাথা নোয়াবার নয়’। ৩৩ বছর পুরনো পত্রিকাটি এ শিরোনামের মধ্য দিয়েই জানিয়ে দিয়েছে, সহিংসতার মুখেও সংবাদমাধ্যম মাথা নত করবে না।
ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর নৃশংস আঘাত হেনে গতকাল গভীর রাতে ঢাকায় সমন্বিত হামলা চালায় একদল লোক। লক্ষ্যবস্তু ছিল দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর প্রধান কার্যালয়।
হামলাকারীরা দুই কার্যালয়েই ব্যাপক ভাঙচুর চালায়, মূল্যবান সামগ্রী লুট করে এবং অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় দ্য ডেইলি স্টারের ভেতরে সাংবাদিক ও কর্মীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। ছাদে আটকে পড়া ২৮ জন সাংবাদিককে কয়েক ঘণ্টা পর উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে রাত প্রায় বারোটার দিকে হামলাকারীরা জোরপূর্বক প্রবেশ করে। এরপর অফিসের আসবাবপত্র ও কাচের দরজা ভাঙচুর করা হয়, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট করা হয় এবং জুলাই আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ছবি ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়।
যেখানে আন্দোলনের ছবি প্রদর্শিত ছিল, সেই ভবনের নিচতলা ও প্রথম তলায় আগুন দেওয়া হয়। নিচতলায় রাখা আসবাবপত্র ও খবরের কাগজের স্তূপে আগুন লাগানো হলে তা দ্রুত দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। হামলাকারীদের আরেকটি দল ভবনের সামনে রাস্তায় আসবাবপত্র টেনে এনে সেখানেও আগুন জ্বালায়।
এদিকে, একদিন বিরতির পর আজ প্রথম আলো প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকাটির প্রধান শিরোনাম, প্রথম আলো-ডেইলি স্টার আক্রান্ত।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সংগঠিত সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে দেশের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো। একই সঙ্গে হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে শীর্ষ ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারও।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সন্ত্রাসীরা কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো এবং কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। পরে দুটি কার্যালয়েই অগ্নিসংযোগ করা হয়।
হামলা শুরু হলে প্রাণ বাঁচাতে প্রথম আলোর সাংবাদিক ও কর্মীরা দ্রুত কার্যালয় ত্যাগ করেন। সহিংসতার কারণে কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ায় গতকাল শুক্রবার প্রথম আলো প্রকাশিত হয়নি।
প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরের ইতিহাসে সংবাদপত্রের ছুটি বাদ দিয়ে এই প্রথম একদিনের জন্য প্রথম আলোর প্রকাশনা বন্ধ থাকল। একই সঙ্গে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণও প্রায় ১৭ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।
ঢাকার বাইরে কুষ্টিয়া, খুলনা ও সিলেটে প্রথম আলোর কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, বগুড়া ও বরিশাল কার্যালয়েও হামলার চেষ্টা করা হয়েছে।