সাহিত্যের পথেই আমি আমার নিজেকে খুঁজে পাই : শাম্মী তুলতুল


MARCH NAEEM 2ND/WhatsApp Image 2025-05-01 at 10.33.44 AM.jpeg

সাহিত্যিক না হয়ে জন্মানো যায় না—এই বিশ্বাস নিয়েই যাঁরা লেখালেখিকে জীবনের অংশ করে তোলেন, তাঁদের মধ্যে একজন শাম্মী তুলতুল। তিনি শুধু একজন লেখক নন; একইসঙ্গে কবি, গল্পকার, শিশুসাহিত্যিক, উপন্যাসিক এবং একজন সচেতন সমাজকর্মী। তাঁর কলমে উঠে আসে সমাজের অসঙ্গতি, ইতিহাসের আলো-আঁধারি, শিশুমনের নির্ভেজাল কল্পনা এবং নারীর মুক্তির কথা। পেয়েছেন বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং পাঠকের নিরন্তর ভালোবাসা।

সম্প্রতি ঢাকা ওয়াচের মুখোমুখি হন এই লেখক। তিনি বলেন তার লেখালেখির যাত্রা, পারিবারিক অনুপ্রেরণা, সাহিত্যভাবনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে। 

ঢাকা ওয়াচ: ঢাকা ওয়াচে আপনাকে স্বাগতম। প্রথমেই জানতে চাইবো—লেখালেখির প্রতি আগ্রহ কীভাবে শুরু হলো?

শাম্মী তুলতুল: ছোটবেলায় খুব চঞ্চল ছিলাম। স্কুলে নাচ, গান, আবৃত্তি করতাম। নিজের লেখা ছড়া আবৃত্তি করে পুরস্কারও পেয়েছিলাম। সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা এসেছিল দাদুর কাছ থেকে। তিনিও একজন লেখক ছিলেন। তাঁর লেখা যখন পত্রিকায় ছাপা হতো, দেখে আমার ভেতরেও লেখার ইচ্ছা জাগে। ক্লাস থ্রিতে প্রথম ছড়া লিখি। এরপর পত্রিকায় লেখা পাঠানো, ছাপা হওয়া—আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

ঢাকা ওয়াচ: আপনি একাধিক পরিচয়ে পরিচিত। লেখক, কবি, গল্পকার, শিশুসাহিত্যিক, উপন্যাসিক—এর মধ্যে কোন পরিচয়টি আপনাকে সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধিত্ব করে বলে মনে করেন?

শাম্মী তুলতুল: একজন লেখক সব ধারাতেই বিচরণ করেন। তাই আমার কাছে সবগুলো পরিচয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ।

ঢাকা ওয়াচ: পরিবারের সাহিত্যিক ঐতিহ্য আপনার লেখালেখির যাত্রায় কতটা প্রভাব ফেলেছে?

শাম্মী তুলতুল: অতুলনীয় প্রভাব। আমার দাদা ও নানু দুজনেই লেখক ছিলেন। তাঁদের কাছ থেকেই সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা পেয়েছি।

ঢাকা ওয়াচ: ‘একজন কুদ্দুস ও কবি নজরুল’ উপন্যাসটি লিখতে গিয়ে সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত কোনটি ছিল?

শাম্মী তুলতুল: কবি নজরুল ও আমার দাদু কুদ্দুস মাস্টারের বিদায়ের দৃশ্যটি লেখার সময় খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। দাদুর মুখে বারবার শুনেছি এই গল্প, আর লিখতে গিয়ে নিজের চোখে জল এসে গিয়েছিল। দাদু একবার কবিকে স্বপ্নেও দেখেছিলেন।

ঢাকা ওয়াচ: আপনার লেখায় যে সামাজিক বার্তা থাকে, সেটা কীভাবে পরিকল্পনা করেন?

শাম্মী তুলতুল: লেখা আমার প্রতিবাদের মাধ্যম। ভাবি, আমি যদি একটা মানুষের চিন্তা বদলাতেও পারি, সেটাই বড় কিছু। অনেকেই নিজের পরিবর্তনের কথা আমাকে জানিয়েছেন।

ঢাকা ওয়াচ: সামাজিক অসঙ্গতি নিয়ে আপনি বারবার লেখেন। আপনার দৃষ্টিতে সবচেয়ে জরুরি পরিবর্তন কোনটি?

শাম্মী তুলতুল: মানুষ যেন নিরাপদ বোধ করে, হয়রানির শিকার না হয়। আর ধর্ষণের মতো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে যেন দ্রুত শাস্তি হয়। এটাই এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন।

ঢাকা ওয়াচ: দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ নিয়ে আপনার ভাবনা লেখায় কীভাবে প্রতিফলিত হয়?

শাম্মী তুলতুল: আমি সরাসরি না লিখে সূক্ষ্মভাবে বার্তা দিই। দুর্নীতিবাজদের নিয়ে লিখি ঘৃণাভরে। যারা সৎ, তারা আমাকে উৎসাহ দেন, আর অন্যরা সমালোচনা করেই যায়।

ঢাকা ওয়াচ: শিশুদের জন্য লেখার সময় আপনি শিক্ষামূলক দিকগুলো কীভাবে তুলে ধরেন?

শাম্মী তুলতুল: আমার নিজের শৈশব, কল্পনাশক্তি আর চারপাশের বাস্তবতা থেকেই উপাদান নিই। আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি শিশুই আলাদা, তারা কারও মতো হয় না। সেই বিশ্বাসই লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করি।

ঢাকা ওয়াচ: আপনার কাছে সবচেয়ে স্মরণীয় পুরস্কার কোনটি?

শাম্মী তুলতুল: সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সবচেয়ে আবেগের পুরস্কার ছিল রত্নগর্ভা সম্মাননা, যা আমার মা পেয়েছিলেন এবং আমি তাঁর হাতে তুলে দিই। সেটিই আমার জীবনের গর্বের মুহূর্ত।

ঢাকা ওয়াচ: আন্তর্জাতিক পাঠকদের প্রতিক্রিয়া কেমন পান?

শাম্মী তুলতুল: আলহামদুলিল্লাহ, দারুণ সাড়া পাই। বিভিন্ন দেশ থেকে পাঠকের চিঠি ও বার্তা আসে। তারা ভালোবাসে বলেই আমি আরও উৎসাহ পাই।

ঢাকা ওয়াচ: বেগম রোকেয়া চরিত্রে মডেলিং করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

শাম্মী তুলতুল: বেগম রোকেয়া নারীর মুক্তির জন্য যে আলো জ্বালিয়েছিলেন, আমি সেই আলোকে ধারণ করি। ২০১৪ সালে লেখালেখির জন্য বেগম রোকেয়া পুরস্কার পেয়েছিলাম। অনেকেই আমাকে রোকেয়ার সঙ্গে তুলনা করেন। চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পাওয়ামাত্র রাজি হয়ে যাই।

ঢাকা ওয়াচ: ‘পিঁপড়ে ও হাতির যুদ্ধ’ নাটকটি কেমন সাড়া ফেলেছিল?

শাম্মী তুলতুল: অসাধারণ সাড়া পেয়েছিলাম। বিশেষ করে শিশুরা দারুণ উপভোগ করেছে। নাটক দেখে অনেকেই বইয়ের খোঁজ করেছিলেন। এটি বইমেলার বেস্টসেলার ছিল।

ঢাকা ওয়াচ: আপনার ভবিষ্যৎ সাহিত্য পরিকল্পনা কী?

শাম্মী তুলতুল: যতদিন বাঁচব, লিখে যাব। অনেকগুলো বইয়ের কাজ হাতে আছে। সময়মতো পাঠকদের জানাব।

ঢাকা ওয়াচ: আপনি কীভাবে চান মানুষ আপনাকে মনে রাখুক?

শাম্মী তুলতুল: লেখক হিসেবেই। আমার মন, প্রাণ, আত্মা—সব সাহিত্যের সঙ্গে জড়িত। তাই আমি চাই, মানুষ আমাকে একজন কথাসাহিত্যিক ও লেখক হিসেবেই মনে রাখুক।

ঢাকা ওয়াচ: তরুণদের জন্য আপনার পরামর্শ কী হবে?

শাম্মী তুলতুল:  প্রথমে খাতায় হাতে লিখে চর্চা করুন। তারপর পত্রিকায় লেখা পাঠান। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আর সবসময় মৌলিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করুন।

ঢাকা ওয়াচ: এখন অনেকেই লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, বিশেষ করে অভিনেতা, গায়ক বা কনটেন্ট ক্রিয়েটররাও। আপনি কীভাবে দেখেন এই প্রবণতা?

শাম্মী তুলতুল: লেখক হওয়া সহজ নয়। নিজের ধারা ও মৌলিকতা ধরে রাখতে হয়। একজন গায়িকা বা অভিনেত্রীর কাজ একসময় কমে যেতে পারে, কিন্তু একজন প্রকৃত লেখকের কলম সারা বছর চলে।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×