পরীক্ষায় পাস নাম্বার ৩৩ হওয়ার কারণ কী?


December 2024/33.jpg

যারা পড়াশোনার সাথে যুক্ত তারা জানেন পরীক্ষায় পাশ নম্বর হিসেবে ধরা হয় ৩৩ নম্বরকে। এ নম্বরের কম নম্বর পেলেই এফ গ্রেড বা ফেল বা অকৃতকার্য শিক্ষার্থী হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু জানেন কী কারা এই ৩৩ শতাংশ পাশ নম্বরের প্রবর্তক?

কখনো কী মনে প্রশ্ন জেগেছে ‌‘৩৩’ সংখ্যাটি এত বিশেষ কেন? কিংবা পরীক্ষায় পাশ নম্বর কেন ৩৩? অথবা পাশ নম্বর ৩২, ৩৪, ৩৫ বা অন্য কোন সংখ্যা কেন হল না?
 
১০০-কে ৩ ভাগ করলে ভাগফল ‘৩৩’-এর কাছাকাছি বলেই কি এই সংখ্যামান নাকি এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে অন্য কোন ইতিহাস?
 
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই পাশ নম্বর ৪০ কিংবা তারও অনেক বেশি ধরা হয়। তবে, বাংলাদেশসহ ভারত, পাকিস্তানে এখনো পরীক্ষায় পাশ নম্বর হিসেবে ৩৩ ধরার নিয়ম চলছে। ইতিহাসে ফিরে তাকালে দেখা যায়, উপমহাদেশে পাশের নম্বর ৩৩ হয়েছে মূলত ব্রিটিশ উপনিবেশের উত্তরাধিকারে।
 
১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে বিট্রিশরা উপমহাদেশের শাসনক্ষমতা দখল করার ১০০ বছর পর জনগণ স্বাধীনতা ফিরে পেতে প্রথম বারের মত সফল আন্দোলন করে ১৮৫৭ সালে, যা সিপাহী বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এরপর ১৮৫৮ সালে এই ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম বারের মত মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা চালু হয়, যা আজও মেট্রিক পরীক্ষা নামে পরিচিত। সে সময় পরীক্ষার্থীদের পাশ নম্বর কত হবে, তা নির্ধারণ নিয়ে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় এবং ব্রিটেনে কনসালটেশনের জন্য চিঠি পাঠান।
 
তখন ব্রিটেনে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের পাশের জন্য ৬৫ শতাংশ নম্বর পেতে হত। সে সময় ইংরেজ সমাজে ব্রিটিশ লর্ডদের ধারণা ছিল, ‘দ্যা পিপল অফ সাবকন্টিনেন্ট আর হাফ অ্যাজ ইনটেলেকচুয়াল অ্যান্ড ইফিশিয়েন্ট অ্যাজ কমপেয়ার্ড টু দ্যা বৃটিশ’ অর্থাৎ বুদ্ধি ও দক্ষতায় ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষকে ইংরেজদের তুলনায় অর্ধেক মনে করা হত।
 
সে হিসেব অনুযায়ী, ৬৫’-এর অর্ধেক হিসেবে ৩২.৫ সংখ্যাকে পাশ নম্বর ধরা নির্ধারিত হয়ে গেল। পরে ১৮৬১ সালে গণনার সুবিধার্থে পাশ নম্বর ৩২.৫-কে একটি পূর্ণসংখ্যা ৩৩-এ রূপ দেয়া হয়। তারপর থেকে এই ১৬০ বছরে কেউই এই মানদণ্ড নিয়ে আপত্তি করেনি।
  
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে ৩৩ পাশ নম্বর হলেও ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করতে হয় জাপান, সৌদি আরব, দক্ষিণ কোরিয়া ও আফগানিস্তানের ছাত্র-ছাত্রীদের। এছাড়া, ইরান, ইরাক ও মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশে পাশ মার্ক ধরা হয় ৫০। বর্তমানে লিখিত পরীক্ষার বাইরে প্রেজেন্টেশন, ফিল্ডওয়ার্ক, অ্যাসাইনমেন্ট ও মৌখিক সাক্ষাৎকারের উপরেও পাশ-ফেল নির্ধারণ করা হয়।
  
তবে, সব দেশের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বর্তমানে চীনের শিক্ষা ব্যবস্থা অন্য দেশের তুলনায় একটু ভিন্ন। এ দেশে পাশ করতে হলে সাধারণত শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম ৬০ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। তবে কোন শিক্ষার্থী যদি পরীক্ষায় এত নম্বর না পায়, তবে সেসব শিক্ষার্থীর জন্য চীনের অর্ধেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মার্ক ব্যাংকের সাহায্য নিতে হয়।
 
যদি কেউ পাশের চেয়ে কম নম্বর পায়, তবে সে শিক্ষার্থী সেখান থেকে নম্বর ধার নিতে পারেন। আর এ ধার পরিশোধ করার সুযোগ থাকে পরের পরীক্ষায়। পরবর্তী পরীক্ষায় সে শিক্ষার্থী যদি বেশি নম্বর পায়, তাহলে ধার দেয়া নম্বর কেটে রাখা হয়। আর এ মানদণ্ডেই একজন শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়ে নতুন ক্লাশে ওঠার সুযোগ পান।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×