
তারাবির নামাজে কি কোরআন দেখে পড়া যাবে?
তারাবির শাব্দিক অর্থ বিশ্রাম নেয়া। ইসলামের পরিভাষায় তারাবি বলা হয় ‘রমাজান মাসে এশার নামাজের পর বিতরের পূর্বে আদায়কৃত সুন্নত নামাজ। তবে চার রাকাত আদায়ের পর বিরতির মাধ্যমে যে বিশ্রাম নেয়া হয় তাকেও ‘তারাবি’ বলে। ইসলামি শরিয়তে তারাবির নামাজের রয়েছে অনেক ফজিলত। তারাবি নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রমজানের রোজা আল্লাহ আবশ্যক করেছেন। যা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ। আর তারাবির নামাজ আল্লাহর রসুল (সা.) চালু করেছেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে তারাবির নামাজ আদায়ে উৎসাহিত করেছেন।হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. বলেন, ‘রসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ রমজান মাসের রোজা তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। আর আমি তোমাদের জন্য রমজান মাসব্যাপী আল্লাহর ইবাদতে দাঁড়ানো সুন্নত হিসেবে চালু করেছি। কাজেই যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান ও পুণ্যের আশা নিয়ে এ মাসের রোজা রাখবে ও নফল অর্থাৎ তারাবির নামাজ পড়বে, সে তার জন্মের দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে।’ (নাসায়ি, হাদিস: ২২১২) একজন জানতে চেয়েছেন, তারাবির নামাজে কি কোরআন দেখে পড়া যাবে?এর উত্তরে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, ‘ফরজ-নফল সব নামাজেই কোরআন শরিফ দেখে দেখে পড়লে নামাজ ভেঙ্গে যায়৷ কেননা কোরআন শরিফ দেখে পড়তে হলে কোরআনের কপি বহন করতে হবে ৷ পাতা উল্টাতে হবে৷ কোরআনের দিকেই নজর রাখতে হবে।’আর নামাজের ভিতরে এসব আমলে কাসিরের অন্তর্ভুক্ত৷ আর আমলে কাসিরের কারণে নামাজ ভেঙ্গে যায়৷ তাছাড়া কোরআন শরিফ দেখে দেখে পড়া যেন কোরআন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা৷ এটি কোনো শিক্ষক থেকে শিখার মত৷ যা নামাজ ভঙ্গের কারণ।

ঐতিহাসিক বদর দিবসের শিক্ষা
জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের ঐতিহাসিক এক অসম লড়াইয়ের নাম বদর যুদ্ধ। আল্লাহ তাআলার অশেষ দয়া ও মেহেরবানিতে সেখানে মজলুম বিজয়ী হয়েছে। দীর্ঘ ১৩টি বছর মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মক্কার কাফিরদের নির্যাতন সয়ে গেছেন। ধৈর্যধারণ ও ক্ষমা করতে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁরা আদিষ্ট ছিলেন। মক্কার কুরাইশদের জুলুমের সীমা ছাড়িয়ে গেলে মদিনায় হিজরতের পর আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের অস্ত্র ধারণের অনুমতি দেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘(কাফিরদের পক্ষ থেকে) যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা হচ্ছে, তাদের (নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য যুদ্ধ করার) অনুমতি দেওয়া হলো। কারণ তাদের প্রতি জুলুম করা হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের জয়যুক্ত করতে পরিপূর্ণ সক্ষম।’ (সুরা হজ: ৩৯) পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে, তোমরা আল্লাহর পথে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করো। তবে সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চিত জেনে রেখো, আল্লাহ তাআলা সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা বাকারা: ১৯০) এই অনুমতির পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান কাফিরদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মদিনা থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বদর প্রান্তরে সংঘটিত এ যুদ্ধের নাম বদর যুদ্ধ। বস্তুগত দিক থেকে এটি ছিল মুসলিম ও কাফিরদের মধ্যে এক অসম যুদ্ধ। মুসলিমরা সংখ্যায় ৩১৩ জন; বিপরীতে কাফিররা ছিল তিন গুণেরও বেশি—১ হাজার জন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা নিজের ওয়াদা অনুসারে মুসলমানদের সাহায্য করেছেন। দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও বদর যুদ্ধে বিজয়ের মালা মুসলমানদের গলায় পরিয়েছেন। (সুরা আল ইমরান: ১১৩) বদর যুদ্ধের শুরু ও শেষের ঘটনাপ্রবাহে বহুবিধ শিক্ষা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম শিক্ষা হলো, জালিমকে আল্লাহ তাআলা একটা সময় পর্যন্ত সুযোগ দিলেও শেষ বিচারে মজলুমের হাতেই জালিমের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। মজলুম ইতিহাসের পাতায় স্বমহিমায় টিকে থাকে, জালিম ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়।

রমজানে মহানবী (সা.) বেশি দান করতেন যে কারণে
রাসূল সা. সব সময় দান করতেন। তবে রমজান মাসে তার দানের পরিমাণ বেড়ে যেতো। রমজানে রাসূল সা.-এর দান সম্পর্কে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে— আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। রমজানে তার দানশীলতা (অন্য সময় থেকে) অধিকতর বৃদ্ধি পেত; যখন জিবরাঈল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। জিবরাঈল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে আগমন করতেন এবং তারা পরস্পরকে কোরআন শোনাতেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) তখন কল্যাণবাহী বায়ুর চেয়ে অধিক দানশীল ছিলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ০৬; মুসলিম, হাদিস : ২৩০৮; মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৬১৬)। রমজানের সংস্পর্শ রমজানের সংস্পর্শের কারণে তিনি এই মাসে বেশি বেশি দান দান করতেন। কারণ, এই বরকতময় মাস নেক আমলের সওয়াব বৃদ্ধি করে, মান-মর্যাদা উন্নীত করে, বান্দাকে আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী করে নেক আমলের মাধ্যমে। কোরআনের নির্দেশনা রমজান মাসে রাসূল সা. বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করতেন। কোরআনের এমন অনেক আয়াত আছে যেখানে আল্লাহর রাস্তায় দান করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। দুনিয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। মানুষকে আখিরাতমুখী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব আয়াত তিলাওয়াত করলে আল্লাহর রাস্তায় দান-সদকার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। কোরআনের এসব আয়াত তিলাওয়াতের মাধ্যমে রাসূল সা. আল্লাহর রাস্তায় বেশি বেশি দানের প্রতি উদ্বুদ্ধ হতেন। জিবরাঈল আ.-এর সংস্পর্শ রমজানের প্রতি রাতে জিবরাঈল আ.-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হতো মহানবী সা.-এর। এই সাক্ষাৎ ছিল সৎ ব্যক্তির সঙ্গে উঠাবসার মতো। আর সৎ ব্যক্তির সঙ্গে উঠাবসা আল্লাহর প্রতি ঈমান বৃদ্ধি করে এবং আনুগত্যের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। এই সাক্ষাতের সংস্পর্শও রাসূল সা.-কে বেশি বেশি দান-সদকা করতে উদ্বুদ্ধ করতো।

টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজলে কি রোজা ভেঙে যায়?
রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট বা অন্য কোনো মাজন ব্যবহার করে দাঁত মাজলে রোজা ভেঙে যায় না। তবে রোজা অবস্থায় এগুলো ব্যবহার করা মাকরুহ বা অপছন্দনীয়। তাই রোজার দিন টুথপেস্ট বা মাজন দিয়ে দাঁত মাজতে চাইলে সাহরির সময় শেষ হওয়ার আগেই সেটা করে ফেলা উচিত। আর সাহরির সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর দাঁত মাজতে চাইলে শুধু ব্রাশ অথবা মিসওয়াক ব্যবহার করা উচিত। মিসওয়াক নবিজির (সা.) অত্যন্ত প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। এটি আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম। আবু বকর সিদ্দীক (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা এবং রবের সন্তুষ্টির মাধ্যম। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৮৯) ওয়াসিলা ইবনুল আসকা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমাকে মিসওয়াকের আদেশ দেয়া হয়েছে। আমার আশঙ্কা হতে লাগল, না জানি তা আমার উপর ফরজ করে দেয়া হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ: ১৬০০৭) আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের উপর আমি যদি কষ্টকর মনে না করতাম, তবে তাদেরকে প্রত্যেক নামাজের আগে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’ (সহিহ বুখারি: ৮৮৭) রোজাহীন অবস্থায় মিসওয়াক যেমন সুন্নত ও ফজিলতপূর্ণ, রোজা অবস্থায়ও মিসওয়াক করা সুন্নত ও ফজিলতপূর্ণ আমল। তাই রোজা অবস্থায় টুথ পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজার বিকল্প হিসেবে যদি মিসওয়াক করেন, তাহলে মুখের পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি মিসওয়াক করার সওয়াবও লাভ করবেন।

যে বছরে রমজান আসবে ২ বার, ঈদ হবে ৩টি
রমজান মাসে ২৯ কিংবা ৩০টি রোজা রাখেন মুসলিমরা। তবে, ২০৩০ সালে ৩৬টি রোজা রাখতে হবে মুসলিমদের। আর ২০৩৩ সালেও দুই বার রোজা পালন ও তিনটি ঈদ হতে পারে। এমন তথ্য জানিয়েছেন দুবাই অ্যাস্ট্রোনমি গ্রুপের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হাসান আহমেদ আল হারিরি। তিনি জানান, ২০৩০ সালে দুটি রমজান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, ইংরেজি বর্ষপঞ্জি ও চন্দ্র বছরের মাসগুলোর পার্থক্যের কারণে এমনটা ঘটবে। সাধারণত ইংরেজি বছরের মাসগুলো ৩০ অথবা ৩১ দিনে নির্ধারিত থাকে। চন্দ্র বছরের মাসগুলো নির্ধারিত হয় ২৯ অথবা ৩০ দিনে। মাসে দিনের এই পার্থক্যের কারণে ইংরেজি বছর শেষে চন্দ্র বছর ১১ দিন কমে যায়। এভাবে বছরে ১১ দিন পার্থক্য থেকে যাওয়ায় ২০৩০ সালে দুবার রমজান মাস পাবেন মুসলিমরা। ২০৩০ সালের গ্লোবাল ইসলামিক ক্যালেন্ডারেও এই তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ২০৩৩ সালেও দুবার পূর্ণ রমজান মাস আসবে এবং সে বছর মোট তিনটি ঈদ অনুষ্ঠিত হবে। বছরে দুবার রোজা রাখার বিষয়টি নিয়ে সৌদি আরব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের জলবায়ুর অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মুসনাদ জানান, ২০৩০ সালের ৫ জানুয়ারি ১৪৫১ হিজরির পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে। এ মাসটি ৩০ দিন পূর্ণ হবে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখে শেষ হবে রমজান মাস। এ হিসাবে পবিত্র রমজান মাসের রোজা হবে ৩০টি। তিনি জানান, একই বছর ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১৪৫২ হিজরির রমজান মাস শুরু হবে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুমিন মুসলমান ৬ দিন রোজা পালন করবে। সে হিসাবে ২০৩০ সালে মুসলিম উম্মাহ ৩৬ দিন রোজা পালন করবে। এ ছাড়া, ২০৩০ সালের গ্লোবাল ইসলামিক ক্যালেন্ডারেও এই তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। ক্যালেন্ডারে দেখা গেছে, ওই বছর প্রথম রমজানটি শুরু হবে ৫ জানুয়ারি, শেষ হবে ৪ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় রমজান মাসটি শুরু হবে ২৬ ডিসেম্বর, যা শেষ হবে ২০৩১ সালের ২৪ জানুয়ারি। সুতরাং, অপর রমজানের ঈদুল ফিতর ঈদটি অনুষ্ঠিত হবে ২০৩১ সালে।

রোজার নিয়ত ও সেহরির দোয়া
রমজানের রোজা ফরজ। হিজরতের দেড় বছর পর স্বয়ং আল্লাহ তাআলা রোজা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তোমারদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে- যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩) রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। বিপুল সওয়াব ও অনুকম্পায় ঋদ্ধ করে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে আল্লাহ তাআলা তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০১; তিরমিজি, হাদিস : ৬৮৩) রোজার নিয়ত কী ও কীভাবে রোজা পালনে সাহরি ও ইফতার গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি রোজার নিয়তও জরুরি। তবে এই ক্ষেত্রে রোজা রাখার উদ্দেশ্যে ঘুম থেকে ওঠা ও সাহরি খাওয়াটাই রোজার নিয়তের অন্তর্ভুক্ত। বস্তুত মনের ইচ্ছাই হলো- নিয়ত। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। তাই কেউ মুখে নিয়ত না করলেও তার রোজাগুলো আদায় হয়ে যাবে। (সূত্র : আল-বাহরুর রায়েক : ২/৪৫২; আল-জাওহারুতুন নাইয়্যিরাহ : ১/১৭৬; রাদ্দুল মুহতার : ৩/৩৩৯, ৩৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৯৫) রোজার যে নিয়ত প্রচলিত বাংলাদেশে রোজার একটি আরবি নিয়ত প্রসিদ্ধ— যেটা মানুষ মুখে পড়ে থাকেন। তবে এটি হাদিস ও ফিকাহের কোনো কিতাবে বর্ণিত হয়নি। তবে কেউ চাইলে পড়তে পারেন। (তবে জেনে রাখা উচিত যে, নিয়ত পড়ার চেয়ে নিয়ত করা গুরুত্বপূর্ণ।) আরবি নিয়ত نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم রোজার নিয়তের বাংলা উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম। অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। ইফতারের দোয়া بسم الله اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন। অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিজিজের মাধ্যমে ইফতার করছি। (মুআজ ইবনে জাহরা থেকে বর্ণিত, আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৮) ইফতারের পরের দোয়া আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) যখন ইফতার করতেন, তখন বলতেন- ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ বাংলা উচ্চারণ : জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতাল্লাতিল উ’রুকু; ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ। অর্থ : ‘(ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৭) ইফতারের ফজিলত সারা দিন রোজা রাখার পর রোজাদারের জন্য ইফতারের মুহূর্তটা পরম আনন্দের। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি আনন্দ হচ্ছে যখন সে ইফতার করে। আরেকটি হচ্ছে যখন সে প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭৬৬) আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন। আমিন।

রোজা রেখে চুল, দাড়ি ও নখ বা শরীরের অবাঞ্ছিত লোম কাটা যাবে?
চলছে পবিত্র রমজান। মাহে রমজানের এই মাসে আমাদের অনেকেরই মনে ছোট ছোট অনেক প্রশ্ন আসে। অনেকে জানতে চায় রোজা রেখে নখ বা শরীরের অবাঞ্ছিত লোম কাটা যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘সিয়ামরত অবস্থায় কেউ যদি হাতের নখ কাটেন বা অবাঞ্ছিত লোমগুলো কাটেন, তাহলে তার সিয়াম নষ্ট হবে না। এটা জায়েজ রয়েছে। এটি মাকরুহ হবে না। সিয়ামের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। পরিচ্ছন্নতার জন্য এটা অনেক ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। উত্তম হলো, এগুলো কেটে নেয়া।’ এই প্রশ্নের উত্তরে শায়খ মাহমুদুল হাসান বলেছেন, ‘হলো- রোজা অবস্থায় নখ কাটাতে বা চুল কাটতে কোনো অসুবিধা নেই। এগুলোর সঙ্গে রোজার কোনো সম্পর্ক নেই। রোজা রেখে দাড়ি সেভ করলেও রোজা ভাঙবে না।’ তথ্যসূত্র : সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩/৩৩; সুনানে কুবরা, বায়হাকি, হাদিস : ৮২৫৩; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ৯৩১৯)

ইবাদতের ‘বসন্তকাল’ রমজান নিয়ে শায়খ আহমাদুল্লাহর স্ট্যাটাস, যা লিখলেন
দেশের আকাশে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। এর মধ্যদিয়ে শুরু হলো অফুরন্ত সওয়াব অর্জনের মহিমান্বিত মাস রমজানের। এ মাসে অল্প আমলেই আছে অনেক বেশি ফজিলত। দেশের আকাশে ফজিলতপূর্ণ এ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর মহান রবের কল্যাণ কামনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ। শনিবার (১ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটের দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ওই স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্যাপশনে দেয়া ওই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে নানা মন্তব্য করার পাশাপাশি প্রায় ৯ হাজার মানুষ স্ট্যাটাসটি শেয়ার করেছেন। স্ট্যাটাসে শায়খ আহমাদুল্লাহ লিখেছেন, ‘নতুন চাঁদের রোশনিতে শুরু হলো ইবাদতের বসন্তকাল। পাপের অন্ধকার মুছে পুণ্যের আলোয় জীবন ভরিয়ে তোলার আরও একটি সুযোগ এলো আমাদের সামনে। আহলান, সাহলান শাহরু রমাদান। এ মাসের যাবতীয় কল্যাণ-বৃষ্টিতে সিক্ত হোক আমাদের শুষ্ক উঠোন- এই পবিত্র ক্ষণে মহান রবের কাছে সেই প্রার্থনা করি।’ এছাড়াও স্ট্যাটাসের মন্তব্যের ঘরে রমজানের চাঁদ দেখে নবীজির শেখানো একটি দোয়া তুলে ধরে শায়খ আহমাদুল্লাহ লিখেছেন, ‘আল্লাহ, এই চাঁদকে আমাদের জন্য কল্যাণ, ঈমান, নিরাপত্তা ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। (হে চাঁদ,) আমার প্রতিপালক এবং তোমার প্রতিপালক আল্লাহ।’ উল্লেখ্য, শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের আকাশে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে রোববার (২ মার্চ) থেকে রোজা রাখতে যাচ্ছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।

এসেছে মাহে রমজান, হিজরি ১৪৪৬
রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। শাবান মাসের শেষে দেশের আকাশে পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখার মাধ্যমে শুরু হল বরকতময় এ মাস। রাসূল সা. চাঁদ দেখে রমজান শুরু ও ঈদুল ফিতর পালন করতে বলেছেন। ইতোমধ্যে শনিবার (১ মার্চ) সন্ধ্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে রমজানের চাঁদ দেখার খবর জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ফলে দেশের মসজিদগুলোতে আজ প্রথম তারাবির নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। মুসল্লিরা উৎসবমুখর পরিবেশে তারাবির নামাজে অংশগ্রহণ করবেন। রমজান মাস আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অসীম রহমত ও বরকত নিয়ে আসে। এ মাস আত্মার পরিশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের মাস। আল্লাহ তগুলো শরিয়ত নাজিল করেছেন, তার প্রতিটিতেই ছিল সিয়াম সাধনা অবশ্য পালনীয় কর্তব্য ও ফরজ। তাই, পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বসূরিদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো বা মোত্তাকি হতে পারো।’ এ মাসের অন্যতম প্রধান ইবাদত হলো রোজা রাখা। শরিয়তের ভাষায় রোজা বলা হয়, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার, যৌনকর্ম এবং আল্লাহ ও তার রসুলের নিষিদ্ধ যাবতীয় কাজ থেকে বিরত থাকা। রমজান মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠতম পবিত্র মাস। এ মাস সকল মুসলমানকে নিয়ে আসে এক বিশেষ প্রশিক্ষণের আওতায়। এক নাগাড়ে ক্রমাগত ত্রিশটি দিন, সাতশ’ বিশ ঘণ্টার কঠিন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি তৈরি করা হয়। শেষ রাতে জেগে ‘সেহরি’ খাওয়া, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও অন্যান্য নিষিদ্ধ কর্ম থেকে বিরত থাকা, সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা, তারপর রাতের একটি বিশেষ অংশ ‘তারাবি’ নামাজে অতিবাহিত করা। এভাবে দীর্ঘ ৩০টি দিন ধর্মপ্রাণ রোজাদারদের প্রশিক্ষণ চলে। এ প্রশিক্ষণ আর কিছু নয়, এ হলো আল্লাহর প্রতি আশরাফুল মাখলুকাত মানব সন্তানদের পরম আনুগত্য, সংযম, ত্যাগ, তিতিক্ষা ও আন্তরিকতার অনুশীলন। এ মাসে মুমিন বান্দার জন্য বিশেষ পুরস্কার হলো ইবাদতের সহজতার জন্য আল্লাহ তায়ালা শয়তানকে পুরো মাস বন্দি করে রাখেন। রাসুলে করিম সা. বলেছেন, ‘মাহে রমজান এলে এর প্রথম রাত থেকে শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলিত করে রাখা হয়। জাহান্নামের সব কটি দুয়ার রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় পবিত্র জান্নাতের সব কটি দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং একজন ফেরেশতা ঘোষণা করতে থাকেন, ‘হে কল্যাণকামী অনুসন্ধানী! তুমি অনুসন্ধান কর ও এগিয়ে চল। আর অকল্যাণকামী পাপাত্মাদের বলতে থাকেন, তুমি থাম।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)। রমজানের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করা সুন্নত। এই দশ দিনের এক দিন মহাপুণ্যময় একটি রাত রয়েছে। রাতটিকে লাইলাতুল কদর বলা হয়। অনেকের মতে, ২৭ তারিখ রাত লাইলাতুল কদর। কারও কারও মতে শেষ দশদিনের যে কোনো বেজোড় রাত। রাসুল সা. বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর’ রমজানের শেষ দশদিনে অনুসন্ধান কর। তাই আমাদেরকে ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ এ রাতগুলো মহিমাময় রাত মনে করে এবাদত করা উচিত।’ হাদিসে বলা হয়েছে, ‘হাজার রাতের চাইতে শ্রেষ্ঠ এ পবিত্র রাত লাইলাতুল কদরের রাত পেয়েও যে ব্যক্তি তাকে কাজে লাগাতে, পরিপূর্ণ মর্যাদা দিতে পারল না, বঞ্চিত হলো সে দুনিয়ার যাবতীয় কল্যাণকামী কাজ থেকে। তার মতো দুর্ভাগা কেউ নেই।’ (ইবনে মাজাহ)।

মুমিনের রমজান প্রস্তুতি: করণীয় ও পরিকল্পনা
পবিত্র রমজানের আগমনের অপেক্ষায় এক অনন্য অনুভূতিতে দিন কাটাচ্ছে মুমিনের হৃদয়। ইবাদতের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে, প্রস্তুতির ধ্বনি বেজে উঠছে জীবনের প্রতিটি প্রান্তে। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার প্রতি গুরুত্ব দিতে বলেছেন এবং নিজেও এই বরকতময় মাসে অধিক ইবাদতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। একজন মুমিনের রমজান কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হল। পূর্ব প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা: রমজানের আগে থেকেই একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা করা জরুরি। প্রয়োজনীয় কাজগুলো গুছিয়ে ফেলা, কায়িক পরিশ্রমের কাজ শেষ করা এবং ইবাদতের সময় বের করা উচিত। ইফতার, সাহরি ও আমল পরিকল্পনার পাশাপাশি কোরআন ও ইসলামিক বই সংগ্রহ করা যেতে পারে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের ইচ্ছা করে, অথচ এখনো তা বাস্তবায়ন করেনি, তার জন্যও সওয়াব লেখা হয়। আর যদি তা সম্পন্ন করে, তাহলে তাকে ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত সওয়াব দেওয়া হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৩৫)দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ: এই রমজান যেন অতীতের যেকোনো রমজানের চেয়ে বেশি বরকতময় হয়, সে লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করা প্রয়োজন। নামাজ, রোজা, দান-সদকা, ইসতেগফার ও কোরআন তেলাওয়াতের পরিকল্পনা করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১)বেশি বেশি দোয়া করা: আল্লাহ তার বান্দার দোয়া শুনেন ও কবুল করেন। রমজানের আগে থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত- ‘হে আল্লাহ, আমাকে সুস্থ রাখুন, আমার জীবন রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন, এবং বরকতময় করে দিন।’ আল্লাহ বলেন, "আমার বান্দারা যখন আমার ব্যাপারে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, বলুন, আমি কাছেই আছি। আমি দোয়া কবুল করি, যখনই কেউ আমাকে ডাকে।" (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬)রমজানের শিক্ষা ও বিধান জানা: রমজানের ফজিলত সম্পর্কে জানা এবং আমল ও মাসায়েল শেখা গুরুত্বপূর্ণ। কোন কাজ করা উচিত এবং কোনটি বর্জনীয়, সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া দরকার। বিশ্বস্ত আলেমদের থেকে মাসায়েল জেনে আমল করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে, যে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।" (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০২৭)নামাজে মনোযোগী হওয়া: অনেকেই ভাবেন, রমজানে এসে নামাজ শুরু করবেন, যা শয়তানের কুমন্ত্রণা ছাড়া কিছু নয়। এখন থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। আল্লাহ বলেন, "নিশ্চয়ই মুমিনরা সফল হয়েছে, যারা তাদের নামাজে বিনম্রতা অবলম্বন করে এবং অনর্থক বিষয় থেকে দূরে থাকে।" (সুরা মুমিন, আয়াত: ১-৩)গুনাহ ও খারাপ অভ্যাস পরিত্যাগ: রমজানের বরকত লাভের জন্য এখন থেকেই গুনাহ ও খারাপ অভ্যাস বর্জন করা প্রয়োজন। পাপাচার ও অপবিত্রতা নিয়ে রমজানে প্রবেশ করলে এর পূর্ণ ফজিলত পাওয়া যাবে না। আল্লাহ বলেন, তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গুনাহ পরিত্যাগ করো। যারা গুনাহ করে, তারা শিগগিরই তার প্রতিফল পাবে। (সুরা আনআম, আয়াত: ১২০)কোরআন তেলাওয়াত করা: রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে এখন থেকেই কোরআন তেলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যারা নিয়মিত পড়েন না, তারা শিখে নেওয়ার চেষ্টা করুন। যারা পড়েন, তারা বেশি বেশি খতম দেওয়ার পরিকল্পনা করুন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে, তার দৃষ্টান্ত সুগন্ধিযুক্ত লেবুর মতো। আর যে ব্যক্তি পড়ে না, তার দৃষ্টান্ত সুগন্ধহীন খেজুরের মতো। (বুখারি, হাদিস: ৫০২০)আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান: রমজান সম্পর্কে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের সচেতন করা উচিত। রমজানের ফজিলত ও করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। সম্ভব হলে মসজিদে ইসলামী আলোচনা বা সেমিনারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আল্লাহ বলেন, তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে আল্লাহর পথে আহ্বান জানায় এবং সৎকাজ করে? (সুরা হামিম সাজদা, আয়াত: ৩১)দান-সদকা করা: রমজানের অন্যতম বিশেষ আমল হলো দান-সদকা। গরিব-দুঃখীদের সহায়তা করা, ইফতার-সাহরির ব্যবস্থা করা এবং অভাবীদের দিকে সহানুভূতির হাত বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান, দান করো, আমিও তোমাদের জন্য ব্যয় করব।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১৯৮) রমজানকে স্বাগত জানাতে এই প্রস্তুতিগুলো নেওয়া গেলে, মুমিনের জন্য এটি হবে এক অনন্য, বরকতময় ও আত্মশুদ্ধির মাস। আল্লাহ আমাদের সকলকে রমজানের যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দান করুন।

রমজানে যেসব কাজ করবেন না
রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। এই মাস মুসলিম উম্মাহর প্রতি আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও অনুকম্পা। রমজানে অত্যধিক নেক আমল ও জিকির-আজকার করা উচিত। এতে বিপুল পরিমাণে সওয়াব লাভ হবে। তবে রমজান মাসের ফজিলত হাসিল করার জন্য এমন কিছু কাজ রয়েছে, যা থেকে বিরত থাকা দরকার। এখানে সে ধরনের কিছু বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হলো। এক. বিলম্বে ইফতার করা আল্লাহর রাসুল (সা.) দেরিতে ইফতার করতে নিষেধ করেছেন। সময়মতো দ্রুত ইফতার করলে উম্মাহ কল্যাণের ভেতর থাকবেন বলেছেন। দুই. সাহরি না খাওয়া সাহরি অনেক বরকতময় খাবার। রাসুল (সা.) সাহরি খেতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। সাহরি খেতে না পারলে অন্তত অল্প কিছু হলেও খেয়ে নেওয়া উত্তম। তিন. কেনা-কাটায় ব্যস্ত থাকা রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই রমজানের সময় যেন কোনোভাবে হেলায়-খেলায় নষ্ট না হয়; সেদিকে সর্বাত্মক খেয়াল রাখতে হবে। অনেকে রমজানের শেষ দিনগুলোতে কেনা-কাটায় মেতে ওঠে। অথচ এমন না করা উচিত; বরং শেষ মুহূর্তের আমলে মগ্ন থাকা চাই। চার. মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা সত্য মুক্তি দেয় এবং মিথ্যা ধ্বংস ডেকে আনে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা মুসলমানদের কর্তব্য। এছাড়াও সব ধরনের পাপ থেকে দূরে থাকা চাই। এটা মুমিনের প্রাত্যহিক কাজ। তবু রমজানে বেশি সতর্কতা কাম্য। পাঁচ. অপচয় ও অপব্যয় করা অপচয় কিংবা অপব্যয় করা খুবই বাজে ও গর্হিত অভ্যাস। পবিত্র কোরআনে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে। আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের পবিত্র কোরআন ও হাদিসের অসংখ্য স্থানে অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এর মানে এই নয় যে অপচয় রোধ করতে গিয়ে কৃপণতা অবলম্বন করবে। মহান আল্লাহ কৃপণদের পছন্দ করেন না। অপচয় ত্যাগ করার অর্থ হলো মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। ছয়. হক আদায় না করে কোরআন খতম করা কোরআন তেলাওয়াতের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছ। পবিত্র কোরআনে কারিম অর্থসহ বুঝে বুঝে খতম করা ও কিংবা তেলাওয়াত করা উত্তম। খেয়াল রাখতে হবে যে, কোরআন তেলাওয়াতের সময় যেন কোরআনের হক নষ্ট না হয়। তাড়াহুড়ো কিংবা অসুন্দরভাবে খতম করা অনুচিত। সাত. জামাতের ফরজ আদায়ে অলসতা রমজান মাসে রোজাদাররা সব কাজকর্ম স্থগিত রেখে দূরদূরান্ত থেকে নামাজের সময় মসজিদ অভিমুখে যাত্রা করেন। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে সমবেত হয়ে জামাতে নামাজ আদায় করেন। এভাবে রোজাদার মুসল্লিরা মসজিদে নামাজ পড়তে এলে তাঁদের পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে। আর এতে ২৭ গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন নামাজ জামাতে আদায়ে অলসতা তৈরি না হয়। আট. বেশি বেশি খাওয়া সাহরি ও ইফতারে কিছুতেই এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়, যা পরবর্তী সময় স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে। আবার এত অল্প আহারও করবে না যে রোজা রাখতে অসুবিধা হয়। কেননা স্বাস্থ্য-সচেতনতাও ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর ইবাদত করার জন্য শক্তি ও স্বাস্থ্য প্রয়োজন। তাই সুস্থ-সবল মুমিন আল্লাহর অধিক প্রিয়। নয়. রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদাত করা রিয়া হলো- লোকদেখানো ও আত্মপ্রদর্শনকারী কাজ বা আমল। রিয়া করা শরিয়তে সম্পূর্ণরূপে হারাম। শিরক হলো দুই প্রকার। শিরকে আকবার বা বড় শিরক। আর শিরকে আসগার বা ছোট শিরক। আর এ রিয়া হলো ছোট শিরক। ফলে রিয়া থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে। দশ. বেশি বেশি ঘুমানো অনেকের ধারণা, যত বেশি ঘুম তত বেশি শরীর ভালো থাকবে। অথচ একজন সুস্থ ও প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন সাত ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট। এরচেয়ে বেশি সময় ঘুমালে কিন্তু তা নানা সমস্যা ডেকে আনতে পারে। বেশি ঘুম মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথার কারণ হতে পারে। এমনকি দেখা দিতে পারে ডায়াবেটিসের মতো অসুখও। তাছাড়া বেশি ঘুম হতে ডিপ্রেশনেরও কারণ। এগার. পণ্যের দাম বাড়াতে সংকট তৈরি করা ভোক্তাদের জিম্মি করা জায়েজ নেই। কেউ তা করে ‘বিত্তশালী’ হয়ে গেলেও কোনো লাভ নেই। তার অবৈধ সম্পদ জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে। দুনিয়ার জীবনেও তার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। উপরন্তু উপার্জন হারাম হওয়ার কারণে নামাজ, রোজা, হজ, দান-সদকা কিছুই কবুল হবে না। মজুদদারি ও কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে কোটিপতি হলেও তার জন্য দারিদ্র্য অবধারিত। বারো. অশ্লীল ছবি-নাটক ইত্যাদি দেখা বর্তমানে সব রকম নাটকের পূর্ণতা নারীদের ছাড়া হয় না। নারী দিয়ে নাটকগুলো সাজানো হয়। আর নারীদের ছবি দেখা স্পষ্ট হারাম। এসব নাটকের উদ্দেশ্য শিক্ষা, ইসলাম প্রচার কিংবা উপদেশ গ্রহণ নয়। বরং খেল-তামাশা ও অবৈধ আনন্দ উপভোগ করা। অতএব, এসব দেখা থেকে সব সময় বেঁচে থাকা জরুরি। তের. বেহুদা কাজে রাত জাগরণ করা রাতে দেরি করে ঘুমাতে নিষেধ করেছেন নবীজি (সা.)। রাসুল (সা.) এশার নামাজের পর গল্পগুজব ও গভীর রাত পর্যন্ত সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর তাগিদ দিতেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ ও কল্যাণজনক কাজে রাত জাগতে নিরুৎসাহিত করা হয়নি। তাই কোনো গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কারণে রাত জাগতে মানা নেই। তবে অযথা গল্প-গুজব, অহেতুক নেট ব্রাউজিং ও গুরুত্বহীন কাজে সময় নষ্ট উচিত নয়। বরং তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া আবশ্যক। চৌদ্দ. দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা ইবাদতের মাস রমজানে বেশি বেশি আমলের কথা রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই ব্যস্ত থাকি দুনিয়াবি কাজে। এটা কাম্য নয়। এ মাসে বেশি বেশি দোয়া-ইস্তেগফার করা উচিত। হাদিসে এসেছে, ‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ তাআলা বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়া রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে।’ (জামিউস সাগির, হাদিস : ৩৯৩৩) পনের. বিদআত করা ইসলামের পরিভাষায় বিদআত বলা হয়, দ্বিনের মধ্যে এমন বিষয় সৃষ্টি করা, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল না; বরং পরে তা উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিদআতের বিরুদ্ধে মহানবী (সা.) অত্যন্ত কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। বিদআত জাহান্নামে নিয়ে যায় বলেছেন। তাছাড়া কিয়ামতের দিন বিতআতকারী চরমভাবে লাঞ্ছিত হবে। তাই সব সময় বিদআত থেকে দূরে থাকতে হবে।

চাঁদ দেখা কমিটি বৈঠকে বসছে সন্ধ্যায়
পবিত্র রমজান শুরুর দিন নির্ধারণ করতে বৈঠকে বসছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। আজ শনিবার (০১ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টায় বায়তুল মোকাররমের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের সভাপতিত্ব করবেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। সভায় পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা বিল্লাল বিন কাসেম জানিয়েছেন, আজ জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি রমজান মাস কবে শুরু হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা সম্পর্কে সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়সমূহ, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করে বাদ মাগরিব জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। চাঁদ দেখা গেলে যেভাবে জানাবেন বাংলাদেশের আকাশে কোথাও রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা টেলিফোন ও ফ্যাক্স নম্বরে অথবা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর জন্য অনুরোধ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। টেলিফোন নম্বর ০২-২২৩৩৮১৭২৫, ০২-৪১০৫০৯১২, ০২-৪১০৫০৯১৬ ও ০২-৪১০৫০৯১৭। ফ্যাক্স নম্বর ০২-২২৩৩৮৩৩৯৭ ও ০২-৯৫৫৫৯৫১।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশে রমজান শুরু শনিবার
বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ায় শনিবার (১ মার্চ) থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। দেশটির সংবাদমাধ্যম অন্তরা জানিয়েছে, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ইন্দোনেশিয়ায় রমজান মাস শুরু হচ্ছে ১ মার্চ থেকে। সে হিসেবে আজ শুক্রবার রাতেই পড়া হবে প্রথম রোজার তারাবির নামাজ। সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, সন্ধ্যার দিকে ইন্দোনেশিয়ার ধর্ম ভবনে ‘ইসবাত’-এর বৈঠক হয়। সেখানে ধর্মীয় ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় শনিবার থেকে প্রথম রমজান উদযাপন করা হবে। দেশটির ধর্মমন্ত্রী নাসরুদ্দিন ওমর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “ইসবাত বৈঠকে সবাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, শনিবার (১ মার্চ) ১৪৪৬ হিজরি সনের রমজান মাস শুরু হতে যাচ্ছে।” ইন্দোনেশিয়ায় কাল থেকেই রমজান শুরু হলেও তাদের প্রতিবেশী মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ে ২ মার্চ থেকে রমজান শুরু হতে যাচ্ছে। দুটি দেশই আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য জানিয়েছে। এরপর ইন্দোনেশিয়া জানায়, তাদের এখানে কালই রমজান শুরু হতে যাচ্ছে।

তারাবিহ পড়াতে সৌদি আরবে যাচ্ছেন বাংলাদেশি হাফেজ আহমাদ
বাংলাদেশের হাফেজদের বিদেশের মাটিতে আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও দেশের বাইরে তারাবিহ পড়াবেন বাংলাদেশের অনেক হাফেজরা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশি এই হাফেজরা বরাবরই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। দেশের লাল সবুজের পতাকাকে সম্মানিত করেছেন। এমনই একজন হাফেজ আহমাদ। আজ মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ থেকে তারাবিহ নামাজ পড়ানোর উদ্দেশ্যে রিয়াদের উদ্দেশে রওনা হবেন হাফেজ আহমাদ। তিনি আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হাফেজদের সফল উস্তাদ শায়েখ কারী নাজমুল হাসান সাহেবের ছাত্র। এ ছাড়া হাফেজ আহমাদ দেশের কয়েকটি বেসকারি টিভি চ্যানেলে আয়োজিত হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি শাবাবুল হুফফাজ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সহকারী সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়ে ‘কোরআর সুন্নাহ মাল্টিমিডিয়া’র সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার আসিফ হোসাইন বলেন, ‘হাফেজ আহামদ একজন হাক্কানী আলেম ও ক্বারী, তিনি দেশের ইসলামী অঙ্গনে যথেষ্ট অবদান রাখছেন। তিনি এ বছর তারাবিহ নামাজ পড়াতে সৌদি আরবের রিয়াদে যাচ্ছেন। আমি তার সফলতা কামনা করছি। তিনি দেশের সুনাম বয়ে আনবেন বলে আশা রাখি।’

রমজানে অফিস সময় ৯টা থেকে সাড়ে ৩টা
পবিত্র রমজান মাসে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা, পবিত্র রমজান মাসে সাহরি ও ইফতারের সময় বিবেচনায় দেশের সব সরকারি ও আধা-সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য অফিস সময়সূচি নির্ধারণ করা হলো। প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, এসব প্রতিষ্ঠানের অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলবে। জোহরের নামাজের জন্য দুপুর ১টা ১৫ মিনিট থেকে দেড়টা পর্যন্ত ১৫ মিনিটের বিরতি থাকবে। ব্যাংক, বিমা, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ডাক, রেলওয়ে, হাসপাতাল ও রাষ্ট্রায়ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা এবং অন্যান্য জরুরি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান জনস্বার্থ বিবেচনায় তাদের নিজস্ব আইন বিধি অনুযায়ী অফিস সময়সূচি নির্ধারণ ও অনুসরণ করবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও তার আওতাধীন সব কোর্টের অফিস সময়সূচি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারণ করবে।

মহানবী (সা.) যেভাবে রমজানের প্রস্তুতি নিতেন
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রজব মাস থেকেই রমজানের জন্য প্রস্তুতি নিতেন। রজব এলেই তিনি রমজানের বরকত লাভের দোয়াটি করতেন। শাবান মাসেও ধারাবাহিকভাবে দোয়াটি পাঠ করতেন তিনি। শাবান মাসে তার রমজানের রোজার প্রস্তুতি গ্রহণের পদ্ধতি কেমন ছিল, এখানে তুলে ধরা হলো— রমজানের প্রস্তুতির জন্য রাসূল সা. শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন। তিনি এই মাসে অন্য যেকোনো মাসের তুলনায় বেশি নফল রোজা রাখতেন। তবে যারা এই মাসের শুরু থেকে নফল রোজা রাখেননি। তাদেরকে তিনি শেষের দিকে নফল রাখতে নিষেধ করেছেন। রমজানসহ যেকোনো আরবি মাস শুরুর আগে রাসূল সা. সেই মাসের চাঁদ দেখতেন। এবং তিনি প্রতি শাবানের শেষে চাঁদ দেখে রমজান মাস শুরু করার কথা বলেছেন। নতুন চাঁদ দেখলে তিনি একটি দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো— اَللّهُّمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالْإِيْمَانِ وَالسَّلاَمَةِ وَالْإِسْلاَمِ رَبِّيْ وِرَبُّكَ الله উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম; রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ। অর্থ : হে আল্লাহ! এ চাঁদকে ঈমান ও নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫২৬) রমজানের ফজিলত, বরকতের আলোচনা শাবান মাসে রাসূল সা. বেশি বেশি রমজান মাস সর্ম্পকে আলোচনা করতেন। এই মাসের ফজিলতের কথা বলতেন। রোজাদারে জন্য আল্লাহ তায়ালা কী কী পুরস্কার রেখেছেন তা আলোচনা করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের নিকট বরকতময় রমজান আগমন করেছে। আল্লাহতায়ালা তার রোজাকে তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, শয়তানকে আবদ্ধ করে রাখা হয় এবং তাতে রয়েছে আল্লাহর জন্য এমন রাত যা হাজার রাত থেকে উত্তম। যে এ মাসের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো- সে প্রকৃতার্থেই বঞ্চিত হলো। ’ (সুনানে নাসায়ি)

মসজিদের টাকা দিয়ে ইফতারের আয়োজন করা যাবে কি?
শরিয়তের নির্দেশনা হলো, যে কোনো দানদাতার ইচ্ছা অনুযায়ী ব্যয় করতে হয়। তাই যে টাকা মানুষ মসজিদের জন্য দিয়েছে তা মসজিদের কাজেই খরচ করতে হবে। মসজিদের জন্য দান করা অর্থ মসজিদ ছাড়া দরিদ্র্য ও অসহায় মানুষদের দান করাসহ অন্য জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা যায় না। এ রকম নির্দিষ্ট ফান্ডে কৃত দান যেহেতু ফান্ড কর্তৃপক্ষের কাছে দাতার আমানত, দাতার ইচ্ছার বাইরে তা খরচ করলে আমানতের দাবি যথাযথভাবে রক্ষিত হয় না। তাই মসজিদের টাকায় দরিদ্র বা অসচ্ছল মুসল্লিদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা যাবে না। ইফতার আয়োজনের জন্য পৃথকভাবে ফান্ড গঠন করতে হবে। মসজিদের সাধারণ ফান্ডের টাকা মসজিদ নির্মাণ, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, নামাজি ও ইতেকাফকারীদের সুযোগ-সুবিধার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা ও আবাসনের ব্যবস্থা, মসজিদে মুসল্লিদের দীনি ইলম চর্চার জন্য পাঠাগার, দীন শেখার ব্যবস্থাপনা, শিশুদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থাপনাসহ মসজিদের সব কাজে ব্যয় করা যাবে। এ সব কাজ করার পরও যদি কোনো মসজিদের অর্থ উদ্বৃত্ত থাকে, তা ভবিষ্যতে মসজিদের সম্ভাব্য নির্মাণ-সম্প্রসারণ ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। মুসলমানদের সমাজের একটি অপরিহার্য ইমারত ও প্রতিষ্ঠান হলো মসজিদ। এটি মুসলমানদের সম্মিলিতভাবে নামাজ আদায়ের স্থান, দীন শেখার স্থান এবং মুসলমানদের সব ধরনের সামাজিক কার্যক্রমের কেন্দ্র। মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ, প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার যাবতীয় খরচের ব্যবস্থা করা মুসলমানদেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, একমাত্র তারাই আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ইমান রাখে, নামাজ কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায়, তারা হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সুরা বাকারা: ১৮) এ আয়াতের আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু বকর জাসসাস (রহ.) বলেন, এ আয়াতের দাবি হল, মসজিদে প্রবেশ, মসজিদ নির্মাণ, এর রক্ষণাবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়ে অমুসলিমের শরিক না করা। (আহকামুল কোরআন: ৩/৮৭) তাই মসজিদের ব্যয় মুসলমানদের স্বতঃস্ফূর্ত অনুদানের মাধ্যমেই হতে হবে। মসজিদের কোনো কাজে অমুসলিম কোনো ব্যক্তি বা অমুসলিমদের কোনো সংগঠনের অনুদান গ্রহণ করা যাবে না।

ইসলামে অন্যের অধিকার রক্ষা ও কষ্ট না দেয়ার আহ্বান
আজকাল মানুষকে কষ্ট দেয়া যেন এক ধরনের সহজলভ্য অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা নিজের অজান্তেই ঘরবাড়ি, চলাফেরা, কথাবার্তা ও নানা কর্মকাণ্ডে অন্যদের ওপর অত্যাচার করি। কখনও হয়তো নোংরা ভাষা ব্যবহার করি, কখনও তাদের অধিকার লঙ্ঘন করি, অসম্মান করি, বা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করি। আমরা এমনকি এক কাজের কথা বলে অন্য কাজ যুক্ত করি, এমনকি কর্মক্ষেত্রে অযথা অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করা বা জুলুম করা চলাফেরায় অন্যকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া, বা অন্যের অনুমতি ছাড়া তাদের সম্পদ গ্রহণ করা, যা তাদের জন্য কষ্টের কারণ হতে পারে। এসব আচরণ আমাদের সমাজে অসম্মান এবং অশান্তি সৃষ্টি করে, হোক সেটা সামাজিক ক্ষেত্রে কিংবা কর্মক্ষেত্রে যা সকলের জন্য ক্ষতিকর। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡذُوۡنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ بِغَیۡرِ مَا اکۡتَسَبُوۡا فَقَدِ احۡتَمَلُوۡا بُہۡتَانًا وَّ اِثۡمًا مُّبِیۡنًا. অর্থাৎ- ‘যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ -সুরা আহযাব : ৫৮আল্লাহ আরও বলেন, ‘وَ مَنۡ یَّکۡسِبۡ خَطِیۡٓىـَٔۃً اَوۡ اِثۡمًا ثُمَّ یَرۡمِ بِہٖ بَرِیۡٓــًٔا فَقَدِ احۡتَمَلَ بُہۡتَانًا وَّ اِثۡمًا مُّبِیۡنًا. অর্থাৎ যে ব্যক্তি ভুল কিংবা গোনাহ করে, অতঃপর কোনো নিরপরাধের ওপর অপবাদ আরোপ করে, সে নিজের মাথায় বহন করে জঘন্য মিথ্যা ও প্রকাশ্য গোনাহ। (সুরা নিসা: ১১২)এছাড়াও আল্লাহ আরো বলেন, ‘وَ اَوۡفُوۡا بِالۡعَہۡدِ ۚ اِنَّ الۡعَہۡدَ کَانَ مَسۡـُٔوۡلًا. অর্থাৎ- আর অঙ্গীকার পূরণ করো, নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সুরা: বনি ইসরাঈল: ৩৪)আল কোরআনুল কারিমে আল্লাহ এই তিনটি আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। এই আয়াত থেকে আমরা বুজতে পারি মানুষকে কষ্ট দেওয়া পাপ! এছাড়াও হাদীসে রসুল সা. এই বিষয়ে বলেন। خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُحْسِنْ إِلَى جَارِهِ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُحْسِنْ إِلَى ضَيْفِهِ. রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দোজখ থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভ করতে চায়, সে যেন আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর বিশ্বাসী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে এবং মানুষের সঙ্গে এমন ব্যবহার করে, যে ব্যবহার সে নিজে অন্যের কাছে আশা করে। (রিয়াজুস সালেহিন : ১৫৬৬) الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ النَّاسُ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ. রসুল (সা.)বলেন, ‘প্রকৃত মুসলমান ওই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অন্যরা নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি : ১০)عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: رَأَى رَجُلٌ فِي الطَّرِيقِ شَجَرَةً تُؤْذِي النَّاسَ فَأَزَالَهَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَরসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তখন সে রাস্তার ওপর একটি কাঁটাযুক্ত বৃক্ষের ডাল দেখতে পেয়ে তা সরিয়ে দিল। আল্লাহ তার এই ভালো কাজটি পছন্দ করেন ও তাকে ক্ষমা করে দিলেন। (মুসলিম: ৬৪৩১)কোরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে অন্যকে কষ্ট দেওয়া, মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা ও অধিকার লঙ্ঘন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব আচরণ সমাজে, কর্মক্ষেত্রে অশান্তির কারণ হতে পারে। মুসলিম হিসেবে আমাকে করণীয় হলো উপরে আয়াত ও হাদীসগুলো অর্থ বুঁজে উপলব্ধি করা। নিজেকে সংশোধন করা।

হজ ফ্লাইট শুরুর তারিখ ঘোষণা
হজ ফ্লাইট শুরুর তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি বছরের হজ ফ্লাইট শুরু হবে আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে। এ ফ্লাইট চলবে ৩১ মে পর্যন্ত। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহানের সভাপতিত্বে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সভায় এ তথ্য জানানো হয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এ বছর ৮৭ হাজার ১০০ হজযাত্রী বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব যাবেন। আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। চলবে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হজযাত্রীদের পরিবহন ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে আগের বছরগুলোর মতো এ বছরও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস মোট হজযাত্রীর ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ৪৩ হাজার ৫৫০ এবং সৌদিয়া এয়ারলাইনস ও ফ্লাইনাস মিলে বহন করবে বাকি অর্ধেক অর্থাৎ ৪৩ হাজার ৫৫০ হজযাত্রী। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, এ বছর হজের উড়োজাহাজ ভাড়া জনপ্রতি ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সভায় ফ্লাইট শিডিউল, বিদেশে রেজিস্ট্রেশনকৃত বাংলাদেশিদের হজ ফ্লাইট, প্রতিটি ফ্লাইট-পরবর্তী যাত্রী সংখ্যা ও অন্য তথ্য পোর্টালে আপলোডকরণ, হজযাত্রীদের লাগেজ ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা এবং হজযাত্রীদের পরিবহন সেবা নিশ্চিতকরণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
/tongi-iz.jpg)
ইজতেমা চলছে দ্বিতীয় দিনের বয়ান, বিকেলে যৌতুকবিহীন বিয়ে
টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে তাবলীগ জামাত আয়োজিত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশে কোরআন-হাদিসের আলোকে বয়ান চলছে। বিশেষ করে ইজতেমার প্রথম দিন পবিত্র শবে বরাত হওয়ায় ময়দানের মুসল্লিরা সারারাত ইবাদত বন্দেগিতে কাটিয়েছেন। আজ আসরের পর যৌতুকবিহীন বিয়ে সম্পন্ন হবে। টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান এরইমধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। রোববার (১৫ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতে শরিক হবেন মুসল্লিরা। মোনাজাতের আগ পর্যন্ত এ ঢল অব্যাহত থাকবে। দু’দিন ধরে সার্বক্ষণিক ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রয়েছেন মুসল্লিরা। প্রতিদিন ফজর থেকে এশা পর্যন্ত ঈমান, আমল, আখলাক ও দ্বিনের পথে মেহনতের ওপর আমবয়ান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাবলিগের ৬ উসুলের (মৌলিক বিষয়ে) ওপর শনিবার বাদ ফজর ভারতের হযরত মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ এর বয়ানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দিনের বয়ান শুরু হয়। বয়ানের বাংলা অনুবাদ করেন মাওলানা ওসামা ইসলাম। বাদ জোহর বয়ান করবেন সৌদি আরবের মাওলানা। তার বয়ান করবেন মাওলানা মোস্তফা খলিল। বাদ আসর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা মঞ্জুর (নিজামউদ্দিন)। তার বয়ান তরজমা করবেন বাংলাদেশের মাওলানা রুহুল আমিন। বাদ মাগরিব বয়ান করবেন মাওলানা সাদ এর ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন বাংলাদেশের মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনই জর্ডান, লিবিয়া, আফ্রিকা, লেবানন, আফগানিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইরাক, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের ৪৯টি দেশ থেকে প্রায় দেড় হাজার মুসল্লি আসেন। ভাষাভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ময়দানে ৪ তাবুতে রয়েছেন মেহমানরা। এর মধ্যে রয়েছে ইংরেজি খিমা, উর্দু খিমা, আরবি খিমা ও বাংলা খিমা। বিশ্ব ইজতেমায় আগত দেশ বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা দিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও মুসল্লিদের ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ১২টি মেডিকেল টিম, ৬টি বিশেষায়িত মেডিকেল টিম, কন্ট্রোল রুম, একটি স্বাস্থ্য শিক্ষা টিম, রেডিওলজি, প্যাথলজি, ফার্মাসিস্ট টিম ও ১১টি স্যানেটারি ইন্সপেক্টর টিম গঠন করা হয়েছে। ১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে ইজতেমা আয়োজন করা হয়। ১৯৬৬ সালে গাজীপুরে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমান ময়দানে স্থানান্তর করা হয় বিশ্ব ইজতেমা। এবছর শুরায়ি নেজাত তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের আয়োজনে ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়। মাঝে ৮ দিন বিরতি দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের অনুসারী (মাওলানা সাদপন্থি) মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিয়েছেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের বিশ্ব ইজতেমার পরিসমাপ্তি ঘটবে।

হারাম টাকার মালিকদের এবাদত কবুল হয় না: ধর্ম উপদেষ্টা
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, যারা হারাম টাকার মালিক, অবৈধ টাকার মালিক তাদের এবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে শবে বরাতের ফজিলত বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন। ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা চাকরি করলাম সরকারি-বেসরকারি, তারপর টাকা লুট করে বিদেশে বাড়ি বানাইলাম। সম্পূর্ণ অবৈধ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাই নাই, মানিলন্ডারিং করে পাঠিয়েছি। আল্লাহর কাছে এসবের জবাব দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি নিজে ২৬ বছর একটা কলেজে প্রফেসর ছিলাম। মাদ্রাসায় পড়িয়েছি। এখানে আসার আগে ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেছি। তিরমিজি আউয়াল পড়াইতাম। তারপরও অবসর নেই।’ ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘চাকরি শেষ হয়ে গেলে মানুষ হজে যায়। চাকরি শেষ হলে মসজিদ কমিটির সভাপতি, মাদ্রাসা কমিটির সেক্রেটারি, ঈদগা কমিটির অর্থ সম্পাদক হয়। এটা আমাদের সমাজের নিয়মিত চিত্র।’ ঢাকা শহরে সাত তলা বাড়ি হয় কী করে? এমন প্রশ্ন রেখে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘কী করা হয় ঢাকা শহরে? আপনার বেতন কত? আপনার স্কেল কত? আমি ২৬ বছর একটা অনার্স কলেজে শিক্ষকতা করেছি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা করেছি, ওয়াজ করেছি, ওয়াজে তো মানুষ কিছু হাদিয়াও দেয়, তারপরও তো চট্টগ্রাম শহরে একটা বাড়ি করতে পারিনি। আমার তো কোনো ফ্ল্যাট নেই। হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। এতে আমার কোনো দুঃখ নেই, কারণ আমি আল্লাহর কাছে জবাব দিতে পারব।’ তিনি বলেন,‘যিনি যত বেশি দুই নম্বরি করে টাকা জোগাড় করে বিদেশে ৩৭০টা বাড়ি করতে পারে তার মর্যাদা তত বেশি। আসুন আমরা এই কালচার বদলে ফেলি।’
/sheborat.jpg)
শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস ও এর ফজিলত
শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। ‘শব’ মানে রাত, ‘বরাত’ মানে মুক্তি। শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী’ বলা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানা ভাষায় যা ‘শবে বরাত’ নামেই অধিক পরিচিত। কোরআনুল কারিমে এসেছে, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয়ই আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয়ই আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি।’ (সুরা-৪৪ দুখান, আয়াত: ১-৫)। মুফাসসিরিনগণ বলেন: এখানে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা বরকতময় রজনী বলে শাবান মাসে পূর্ণিমা রাতকেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি, রুহুল মাআনি ও রুহুল বায়ান)। হজরত ইকরিমা (রা.) প্রমুখ কয়েকজন তাফসিরবিদ থেকে বর্ণিত আছে, সুরা দুখান–এর দ্বিতীয় আয়াতে বরকতের রাত বলে শবে বরাতকে বোঝানো হয়েছে। (মাআরিফুল কোরআন)। হাদিস শরিফে আছে, ‘হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধশাবানের রাতে মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫, ইবনে মাজাহ: ১৩৯০, রাজিন: ২০৪৮; ইবনে খুজাইমা, কিতাবুত তাওহিদ, পৃষ্ঠা: ১৩৬, মুসনাদে আহমদ, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১৭৬)। হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, “হে আয়শা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে?” আমি উত্তরে বললাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না।’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘তুমি কি জানো এটা কোন রাত?’ আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন।’ তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।’ (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮২)।শবে বরাত পালনের তাৎপর্য হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে: নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া–বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুনাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি: ৭৩৯)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে। (ইবনে মাজাহ)। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাত ইবাদত–বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো। কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, ‘কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিক প্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব।’ এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)।শবে বরাতে করণীয় ও বর্জনীয় এ ছাড়া প্রতি মাসের ৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামেবিদের নফল রোজা তো আছেই, যা হজরত আদম (আ.) পালন করেছিলেন এবং আমাদের প্রিয় নবী (সা.)ও পালন করতেন, যা মূলত সুন্নাত। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ফকিহ হাফিজ ইবনে রজব (রা.) বলেন, এদিনের রোজা আইয়ামেবিদের রোজার অন্তর্ভুক্ত। (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা: ১৫১)। এ ছাড়া মাসের প্রথম তারিখ, মধ্য তারিখ ও শেষ তারিখ নফল রোজা গুরুত্বপূর্ণ। শবে বরাতের রোজা এর আওতায়ও পড়ে। সওমে দাউদি পদ্ধতিতে এক দিন পর এক দিন রোজা পালন করলেও প্রতিটি বিজোড় তারিখ রোজা হয় এবং শবে বরাতের রোজার শামিল হয়ে যায়। সর্বোপরি রাসুল (সা.) রমজান মাসের পর রজব-শাবান মাসে বেশি নফল নামাজ ও নফল রোজা পালন করতেন, শাবান মাসে কখনো ১০টি, কখনো ১৫টি, কখনো ২০টি নফল রোজা, কখনো আরও বেশি রাখতেন। এমনকি উম্মুহাতুল মুমিনিনগণ বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে এভাবে নফল রোজা রাখা শুরু করতেন, মনে হতো, তিনি আর কখনো রোজা ছাড়বেন না। (মুসলিম)।
/sheborat.jpg)
পবিত্র শবে বরাত আজ
সারাদেশে আজ (শুক্রবার) দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি মুসলমানরা শবে বরাত বা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। রাতটি ‘লাইলাতুল বরাত’ হিসেবেও পরিচিত। পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষ্যে আগামীকাল শনিবার সরকারি ছুটি থাকবে। এই রাতে বাসাবাড়ি ছাড়াও মসজিদগুলোতে নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ, মিলাদ মাহফিলসহ ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাবেন। মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মুসলমানরা বিশেষ মোনাজাত করবেন। শবে বরাত উপলক্ষ্যে আজ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ওয়াজ, দোয়া, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, হামদ-নাতসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে বায়তুল মোকাররম মসজিদে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে লাইলাতুল বরাতের শিক্ষা ও করণীয় বিষয়ে ওয়াজ করবেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও এ উপলক্ষ্যে ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।

আয়নাঘরের বিভীষিকা যেন আর ফিরে না আসে: শায়খ আহমাদুল্লাহ
আয়নাঘরের বিভীষিকাময় দিনগুলো যেন এই দেশে আর ফিরে না আসে সেই আশা ব্যক্ত করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন প্রখ্যাত ইসলামি আলোচক ও সমাজ সেবক শায়খ আহমাদুল্লাহ। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, আয়নাঘরের সে বীভৎস দিনগুলো আর কখনো ফিরে না আসুক এদেশে। এর আগেও আয়নাঘর নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন এই স্কলার। এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেছিলেন, গুয়ানতানামো বে কিংবা আবু গারিব কারাগারের নাম শুনলেই আমাদের গা শিউরে ওঠে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে লোমহর্ষক নির্যাতনের মর্মান্তিক সব দৃশ্য। অথচ আমরা এখন আয়নাঘরের যে বীভৎসতার খবর জানছি, তা যেন গুয়ানতানামো বে, আবু গারিব কারাগারকেও হার মানায়। গতকাল বুধবার শায়খ আহমাদুল্লাহর সে কথার প্রমাণ মিলেছে। রাজধানীর কচুক্ষেত, আগারগাঁও এবং উত্তরা এলাকার তিনটি আয়নাঘর পরিদর্শন করেন ড. ইউনূস। যেগুলো স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টর্চার সেল এবং গোপন বন্দিশালা হিসেবে ব্যবহার হতো। পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টাসহ উপস্থিত প্রতিনিধিরা সেখানে ইলেকট্রিক চেয়ারসহ নির্যাতনের জন্য ব্যবহৃত উপকরণ দেখতে পান। এসময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীরা তাদের নির্যাতনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। আয়নাঘর পরিদর্শনশেষে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এরকম টর্চার সেল সারা বাংলাদেশজুড়ে আছে। আমার ধারণা ছিল, শুধু এখানে আয়নাঘর বলতে কয়েকটা আছে। এখন শুনতেছি, আয়নাঘরের বিভিন্ন ভার্সন সারা দেশজুড়ে আছে। কেউ বলে ৭০০, কেউ বলে ৮০০। সে সংখ্যাটা এখনো নিরূপণ করা যায়নি, কতটা জানা আছে, কতটা অজানা আছে। তিনি বলেন, আইয়ামে জাহেলিয়াত নামে একটা কথা আছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আইয়ামে জাহেলিয়াত প্রতিষ্ঠিত করে গেছে সর্বক্ষেত্রে। আয়নাঘর তার একটা নমুনা মাত্র।