 যেভাবে শোক প্রকাশ করতেন.jpg)
আপনজনের মৃত্যু মানুষের জন্য গভীর শোক ও দুঃখের কারণ হয়। ইসলামে এই কষ্ট ধৈর্যধারণের মাধ্যমে মোকাবেলা করলে আল্লাহ তায়ালা ব্যক্তিকে প্রতিদান দেন। কারো মৃত্যুর খবর পেলে মানুষকে উচিত ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, “আমি যার কোনো প্রিয়জনকে উঠিয়ে নিই আর সে ধৈর্যধারণ করে এবং নেকির আশা রাখে আমি তাকে জান্নাত দিয়েই সন্তুষ্ট হব।” (তিরমিজি, হাদিস : ২৪০১)
তবুও যদি কষ্ট সহ্য করা কঠিন হয়ে ওঠে, তখন নীরবভাবে কান্না করা যায়। তবে চিত্কার করে, বুক চাপড়ে কাঁদা, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা মাতম করা ইসলামের পদ্ধতি নয়। এগুলো হলো জাহিলি যুগের প্রথার পুনরাবৃত্তি।
আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, “যে শোকে গালে চপেটাঘাত করে, জামার অংশবিশেষ ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহিলি যুগের মতো চিত্কার করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (বুখারি, হাদিস : ১২৩৫)
মহানবী (সা.)-এর ছেলে ইবরাহিমের (রা.) মৃত্যুর পর তিনি তাঁর দেহ কোলে নিয়ে পিতৃস্নেহে কেঁদে ওঠেন। সাহাবি হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) প্রশ্ন করেন, “আপনি কাঁদছেন? আপনি তো কাঁদতে নিষেধ করেছেন?”
মহানবী (সা.) উত্তর দেন, “না, স্বাভাবিক, অনিচ্ছাকৃত কান্না আমি নিষেধ করিনি। তবে দুই ধরনের কান্না আমি নিষিদ্ধ করেছি: এক, সৃষ্টিকর্তার প্রতি অভিযোগ করে কান্না করা; দুই, বিলাপ করে চিত্কার করা। চিত্কার করে, বুক চাপড়ে কাঁদা, মাতম করা এবং জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা ইসলামের পদ্ধতি নয়। এগুলো জাহিলি যুগের কর্মকাণ্ড।” (মুসলিম, ১৭ মিশকাত, ২৭)
আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.)-এর কন্যা উম্মে কুলসুম ইন্তেকাল করার পর তার কবরের পাশে বসে ছিলেন এবং চোখ থেকে অশ্রু ঝরছিল। (শামায়েলে তিরমিজি : ৩১২/৬)
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, উসমান ইবনে মাজউন (রা.)-এর মৃত্যুর পর মহানবী (সা.) তার ললাটে চুম্বন করেন। তখনও তার চোখ থেকে অশ্রু ঝরছিল। (শামায়েলে তিরমিজি : ৩১১/৫)
উহুদ যুদ্ধে নবীজির চাচা হামজা (রা.) শহীদ হন। যুদ্ধ শেষে রাসুল (সা.) শহীদদের লাশ দেখতে গিয়ে চাচা হামজার লাশের জন্য কাঁদেন এবং বলেন, “চাচা, মহান আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করুন! তুমি ছিলে আত্মীয়তার বন্ধনকারী, সৎকর্মপরায়ণ। তোমার বোন সাফিয়্যা হয়তো সহ্য করবে না, না হয় আমি তোমার লাশ দাফন না করে এভাবে ফেলে রাখতাম, পশু-পাখি তোমাকে খেয়ে ফেলত।” এরপর তিনি প্রতিশোধের শপথ নেন। কিছু সময় পর সুরা নাহল ১২৬-১২৭ নাজিল হয়:
“আর যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ করো, তবে ওই পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, যে পরিমাণ তোমাদের কষ্ট দেওয়া হয়। যদি সবর করো, তবে তা সবরকারীদের জন্য উত্তম। আপনার সবর তো আল্লাহরই সাহায্যে। তাদের জন্য দুঃখ করবেন না এবং তাদের চক্রান্তের কারণে মনঃক্ষুণ্ন হবেন না।”
এই আয়াত নাজিলের পর মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, তিনি ধৈর্য ধারণ করবেন এবং কোনো প্রতিশোধ নেবেন না। ফলে প্রতিশোধ নিলে কাফফারা আদায় করেছেন।