পরকালে যেসব আমলের সওয়াব স্থায়ী হবে


News Defalt/1716128597.wahat-al-karama-united-arab.jpg

মানুষের মৃত্যুর পর পৃথিবীর সব কিছুর সঙ্গে মৃত ব্যক্তির সব বন্ধন শেষ হয়ে যায়। রক্তের সম্পর্ক কিংবা ধনদৌলতের প্রতাপ কিছুই কাজে আসে না।

কেবল নেক আমলই তার সঙ্গী হয়ে পরকালীন প্রতিটি ধাপে তাকে সাহায্য করবে। এ জন্যই আল্লাহ সন্তান ও সম্পদকে দুনিয়ার সৌন্দর্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন আর কঠিন সময়ে সঙ্গদানকারী নেক আমলকে বাকিয়াতুস সালিহাত তথা স্থায়ী সৎকর্ম বলে উল্লেখ করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে, ‘ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদানপ্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্য উত্তম। ’ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ৪৬)

উক্ত আয়াতে বর্ণিত বাকিয়াতুস সালিহাত তথা স্থায়ী সৎকর্মের বিশ্লেষণ নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ বলেছেন, বাকিয়াতুস সালিহাত হলো পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ। যেমনটি হাদিস শরিফে এসেছে, উবায়দুল্লাহ বিন উতবা (রহ.) সাহাবি ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, বাকিয়াতুস সালিহাত তথা স্থায়ী সৎকর্ম হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ।

আরও কয়েকটি সনদে হজরত সাঈদ বিন জুবাইর ও আমর বিন শুরাহবিল (রহ.) থেকেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। আরেক দল উলামায়ে কিরাম বাকিয়াতুস সালিহাত-এর ব্যাখ্যায় বলেন, স্থায়ী সৎকর্ম হলো তাসবিহ-তাহলিলের মাধ্যমে আল্লাহর জিকির করা। তারা নিজেদের কথার সমর্থনে নবীজির হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। এক বর্ণনায় এসেছে, উমারা ইবনু সাইয়্যাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব  (রা.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘বাকিয়াতুস সালিহাত’ (যা কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে) সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহু আকবারু ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ হচ্ছে বাকিয়াতুস সালিহাত। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস : ৪৭৭)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, স্থায়ী সৎকাজ বা যে সৎকাজের পুণ্য স্থায়ী হবে, সে দোয়াটি হচ্ছে এই—‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবারু ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। ’

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আল্লাহর জন্যই পবিত্রতা, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহর জন্যই যাবতীয় প্রশংসা, পাপকাজ হতে দূরে থাকার এবং পুণ্যকাজ সম্পাদন করার ক্ষমতা আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কারো নেই। (বুলুগুল মারাম, হাদিস : ১৫৪৫)

আবার কেউ কেউ বলেছেন, স্থায়ী সৎকর্ম হলো উত্তম কথা বলা। (জামেউল বয়ান : ২৮/৩৫)

তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও ভারসাম্যপূর্ণ মত হলো- সব ধরনের সৎকর্ম, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়—এ সব কিছুই বাকিয়াতুস সালিহাত তথা স্থায়ী সৎকর্মের অন্তর্ভুক্ত।

যেমন—আল্লাহর জিকির দরুদ শরিফ পাঠ করা, রোজা রাখা, নামাজ পড়া, হজ করা, সদকা করা, দাস মুক্ত করা, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা এবং সব ধরনের নেক আমলই বাকিয়াতুস সালিহাত, যা বাকি থাকবে যত দিন আসমান-জমিন থাকবে বান্দাকে জান্নাতে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত।

শেষোক্ত মতটিই অধিকতর নির্ভরযোগ্য। কেননা আল্লাহ তাআলা এর ব্যাখ্যায় আয়াতে এবং নবী করিম (সা.) হাদিসে অন্য সব আমল থেকে নির্দিষ্ট কোনো আমল উল্লেখ করেননি। হাদিসের বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, সেখানে বোঝানো হয়েছে যে এ সবই হলো স্থায়ী সৎকর্ম। কোথাও এ কথা বলা হয়নি যে শুধু এগুলোই বাকিয়াতুস সালিহাত, বরং হাদিসে যেসব সৎকাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে আর যা উল্লেখ করা হয়নি—সবই স্থায়ী সৎকর্ম।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে স্থায়ী সৎকর্মের ওপর অটল থাকার তাওফিক দান করুন।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×