
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের দেশে ফেরত যেতে বাধ্য না করায় ভারত একটা মানবিক কাজ করেছে। এমনই মন্তব্য করেছেন ভারতের কংগ্রেস দলের সংসদ সদস্য শশী থারুর। ভারতীয় একটি সংবাদসংস্থাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, হাসিনা ছিলেন ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং যতদিন না পর্যন্ত তার আইনি দিকগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত তিনি নিরাপত্তা পাওয়ার যোগ্য।
ভারতীয় একটি সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে থারুর বলেন, শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাঁর মতে, আইনি দিকগুলো সম্পূর্ণভাবে যাচাই না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার তাঁর থাকা উচিত।
ভারতের সাবেক এই আন্তর্জাতিক কূটনীতিক বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিষয়ে বলতে গেলে, ভারত সঠিক মানবিক চেতনায় কাজ করেছে, কারণ বহু বছর ধরে ভারতের একজন ভালো বন্ধুকে তার নিজের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে জোর করেনি’। তিনি মনে করেন, প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত ইস্যু অত্যন্ত জটিল, যেখানে নানা ধরনের আইনি বিধান, আন্তর্জাতিক চুক্তি ও ব্যতিক্রম জড়িয়ে থাকে, যা খুব অল্প মানুষই পুরোপুরি বোঝে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমি এই বিষয়টি সরকারের ওপরই ছেড়ে দেব যাতে তারা যথাযথ বিবেচনা করে। কিন্তু এরই মধ্যে, যখন আমরা একজন ভালো বন্ধুর প্রতি আতিথেয়তা দেখাচ্ছি, আমার মনে হয় সরকারের পক্ষ থেকে সমস্ত বিষয় আরও বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা না করা পর্যন্ত আমাদের তাকে নিরাপদে থাকতে দেয়া উচিত।’
শেখ হাসিনাকে ঘিরে শশী থারুরের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে সামনে এলো, যখন ঢাকায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের পর ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন করে চাপের মুখে পড়েছে। একই সময়ে ময়মনসিংহে দিপু দাস হত্যার ঘটনাও দুই দেশের মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি করেছে, যার জেরে পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদ আরও জোরালো হচ্ছে।
এর আগে চলতি ডিসেম্বর মাসে দেওয়া আরেক বক্তব্যে থারুর বলেছিলেন, বাংলাদেশে চলমান সহিংস বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভারতের পক্ষে সাধারণ বাংলাদেশিদের সহায়তা করা কঠিন হয়ে উঠছে। ওই সময় তিনি সাবেক ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর বহুল উদ্ধৃত মন্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেন, যেখানে বলা হয়েছিল, প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্ষেত্রে ভূগোল পরিবর্তন করা যায় না এবং বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই সম্পর্ক এগোতে হয়।
সেই বক্তব্যে শশী থারুর আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত্ব যেন আরও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। বাজপেয়ীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও যেমন বলা হয়েছিল, ভূগোল বদলানো যায় না। ভারত যেখানে আছে, বাংলাদেশও সেখানে আছে; ফলে পারস্পরিক সহযোগিতার বিকল্প নেই।
তিনি আরও জানান, নয়াদিল্লি পরিস্থিতির ওপর সতর্ক নজর রাখবে। থারুরের ভাষ্য অনুযায়ী, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তারা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বজায় রাখবেন এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সম্ভাব্য সব উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানাবেন।