
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন প্রস্তাবিত শান্তি নকশাকে ইউক্রেন সংকট থামানোর সম্ভাব্য ভিত্তি হিসেবে দেখছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মস্কোতে রাশিয়া সিকিউরিটি কাউন্সিলের বৈঠকে তিনি জানান, ওয়াশিংটনের এই উদ্যোগ গ্রহণ করা গেলে দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয় থামতে পারে।
পুতিন বলেন, “আমার বিশ্বাস, এটি ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তির ভিত্তি হতে পারে। মার্কিন প্রশাসন অবশ্য এখন পর্যন্ত এ পরিকল্পনার ব্যাপারে ইউক্রেনের সম্মতি আদায় করতে পারেনি। কারণ ইউক্রেন এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে।” তার দাবি, কিয়েভ ও পশ্চিমা মিত্ররা পরিকল্পনাটিকে আলোচনার টেবিলে আনতে না চাইলে যুদ্ধের গতিপথ আরও জটিল হবে।
রুশ প্রেসিডেন্ট কঠোর সতর্কবার্তাও দেন। তিনি বলেন, “যদি কিয়েভ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে না চায় কিংবা প্রত্যাখ্যান করে; সেক্ষেত্রে ইউক্রেন এবং তার যুদ্ধবাজ ইউরোপীয় মিত্রদের এটা বোঝা উচিত যে সম্প্রতি আমরা পূর্ব ইউক্রেনের প্রধান শহর কুপিয়ানস্ক দখল করেছি এবং যুদ্ধবিরতি না ঘটছে একসময় পুরো ইউক্রেন আমাদের কব্জায় আসবে।”
২০১৪ সালে রাশিয়া কৃষ্ণসাগর উপকূলের কৌশলগত অঞ্চল ক্রিমিয়া দখল করে নিজের ভূখণ্ডে যুক্ত করে। ২০১৫ সালের মিনস্ক চুক্তিতে ইউক্রেন এ নিয়ন্ত্রণ মেনে নেওয়ার অঙ্গীকার করলেও পরে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা শুরু করায় দুই দেশের সম্পর্ক দ্রুত অবনতি হয়। দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হয়। প্রায় চার বছরের যুদ্ধে দনেৎস্ক, লুহানস্ক, ঝাপোরিজ্জিয়া ও খেরসনসহ ইউক্রেনের মোট ১৯ শতাংশ ভূখণ্ড এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ২৮ দফার একটি শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করেছে। এতে প্রস্তাব করা হয়েছে ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি। ঝাপোরিজ্জিয়া ও খেরসন থেকে রুশ বাহিনী সরে গেলেও ঝাপোরিজ্জিয়ার বিশাল পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অর্ধেক মালিকানা রাশিয়ার হাতে থাকবে।
পরিকল্পনায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যুদ্ধকালীন রাশিয়া, প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং তার ঘনিষ্ঠদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পুতিনবিরোধী গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও বাতিলের প্রস্তাব রয়েছে।
রাশিয়া সিকিউরিটি কাউন্সিলের বৈঠকে পুতিন জানান, গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ট্রাম্পের সঙ্গে এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল তার।
সূত্র: রয়টার্স