কর্মীর হাতে পিটুনি খেয়ে বিএনপি নেতার আত্মহত্যা
- খুলনা প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১১:৩৮ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

খুলনায় দলীয় প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীর হাতে মারধরের শিকার হয়ে অপমান সইতে না পেরে এক বিএনপি নেতা আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। শনিবার বিকালে খুলনা নগরীর গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। স্বজনরা তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
নিহত মোশারফ হোসেনের বয়স ৪৪ বছর। তিনি পাইকগাছা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ছিলেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ওয়ার্ড কাউন্সিলে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন, বিএনপি'র দুর্দিনে পরীক্ষিত এই কর্মী বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার পাইকগাছা পৌর বিএনপি’র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডা. আবদুল মজিদের অনুসারী হিসেবে সভাপতি পদে মিরাজ ও সাধারণ সম্পাদক পদে সেলিম রেজা লাকী প্রার্থী হন। অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক এনামুল হকের অনুসারী হিসেবে সভাপতি পদে আসলাম পারভেজ ও সাধারণ সম্পাদক পদে কামাল আহমেদ সেলিম নেওয়াজ প্রার্থী ছিলেন। নিহত মোশারফ ছিলেন ডা. মজিদের অনুসারী। তিনি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী লাকীর সমর্থনে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন।
গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে সেলিম রেজা লাকী বলেন, “মোশারফ ছিলেন পাইকগাছা বিএনপির দু:সময়ের পরীক্ষিত কর্মী। আওয়ামী আমলে অনেক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেও বিএনপির সঙ্গে ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক। আমরা ডা. মজিদের অনুসারী হিসেবে সম্মেলনে প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু সম্মেলনের দিন বিকাল ৩টার দিকে পৌর বিএনপির নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজের ভাই রাজীব নেওয়াজ মোশারফকে গালিগালাজ ও মারধর করেন। আগেও তাকে অনেকবার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়। এই অপমান সহ্য করতে পারেননি মোশারফ।”
নিহতের বন্ধু অ্যাডভোকেট সাইফুদ্দিন সুমন বলেন, “মোশারফ দলকে ভালোবাসতেন। তেমনি প্রচণ্ড আবেগি ছিলেন। তাকে পেটানোয় অপমানিত হন। রাতেও অনেক সময় কথা হয়। কিন্তু তিনি নীরব ছিলেন। ভোর সাড়ে ৬টার দিকে তার মেয়ে ফোন করে জানায়, মোশারফ বিষ খেয়েছেন। তাকে প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে আইসিইউ না পাওয়ায় গাজী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। তবে এটা আত্মহত্যা নয়, মোশারফকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিম নেওয়াজ নামের ওই ব্যক্তি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ক্ষিপ্ত হন এবং বলেন, “আমাকে ফোন দিয়েছেন কেন? নেতাদের ফোন দেন। সভাপতি পদ প্রার্থী আসলাম পারভেজকে ফোন দেন।” মোশারফকে তার ভাই কেন পিটিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি উত্তেজিত হয়ে ফোন কেটে দেন।
এদিকে, এই বিএনপি নেতার মৃত্যুর খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা তীব্র বাধার মুখে পড়েন। অনেক সাংবাদিককে হাসপাতালে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। নিহতের পরিবারের কান্নাকাটির ছবি তোলার সময় এক সাংবাদিকের ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে মেমরি কার্ডের সব ছবি মুছে ফেলা হয়। খুলনা জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে এই ঘটনা ঘটলেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, “পারিবারিক বিষয়ে মনোকষ্টে বিষপান করেছিলেন মোশারফ।” এসময় তার ওপর হামলা ও অপমানের প্রসঙ্গ তুললে তিনি তাড়াহুড়ো করে বলেন, “আসলে আমি এইমাত্র খবর পেয়ে এসেছি। বিস্তারিত না জেনে বলতে পারছি না।” সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ছবি ডিলিট করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটা নিউজ হওয়ার মতো বিষয় না। এজন্য হয়তো কেউ নিষেধ করেছে।”