গণপিটুনিতে জামাই-শ্বশুরের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ
- রংপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১০:০২ পিএম, ১০ আগস্ট ২০২৫

রংপুরের তারাগঞ্জে চুরি সন্দেহে গণপিটুনিতে দুইজন নিহতের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে স্থানীয় জনতা। নিহতদের মরদেহ নিয়ে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিচারের দাবিতে স্লোগান দেন। রোববার (১০ আগস্ট) রাত ৭টা ৪০ মিনিটে পুলিশের অনুরোধে তারা অবরোধ তুলে নেন।
নিহত দুই ব্যক্তি হলেন রুপলাল দাস (৪০) ও প্রদীপ দাস (৪৫)। পারিবারিক সম্পর্কে তারা জামাই ও শ্বশুর। রুপলালের ভাগ্নির জামাই ছিলেন প্রদীপ। পেশায় রুপলাল ছিলেন জুতা সেলাইয়ের কারিগর, কাজ করতেন তারাগঞ্জ বাজারে।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পর নিহত রুপলালের স্ত্রী মালতী রাণী দাস থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. আমিরুল ইসলাম।
পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, রোববার রূপলালের মেয়ের বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। এ উপলক্ষে আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলতে মিঠাপুকুর থেকে নিজের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে রওনা দেন প্রদীপ দাস। পথ ভুলে গেলে তিনি রুপলালকে ফোন করেন এবং জানান তিনি সয়ার ইউনিয়নের বটতলায় অবস্থান করছেন, যেখানে দুটি রাস্তা বুড়িরহাট ও কাজীরহাটে চলে গেছে। রুপলাল তাকে সেখানেই থাকতে বলেন এবং পরে এসে তাকে সঙ্গে নিয়ে ঘনিরামপুর ডাঙ্গাপাড়ার নিজ বাড়ির দিকে রওনা হন।
কিন্তু রাত ৯টার দিকে তারা যখন তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছান, তখন স্থানীয়রা তাদেরকে ভ্যান চোর সন্দেহে আটকে ফেলেন। মুহূর্তেই উত্তেজিত জনতা জড়ো হয়ে যায়। সন্দেহ আরও বাড়ে যখন প্রদীপের অটোরিকশা থেকে চারটি ছোট প্লাস্টিক বোতল বের করা হয়। একটি বোতলের ঢাকনা খুলতেই পাশের গ্রামের দুই ব্যক্তি — আলমগীর হোসেন ও মেহেদী হাসান — অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানা গেছে।
এরপর জনতা ধারণা করে, বোতলগুলোতে অজ্ঞান করার মতো তরল পদার্থ রয়েছে এবং তারা ভ্যান চুরি করতে এসেছিলেন। এমন সন্দেহ থেকেই শুরু হয় মারধর। বটতলা থেকে পিটাতে পিটাতে দু’জনকে নিয়ে যাওয়া হয় বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে, যেখানে তাদের আরও মারধর করা হয়। মারধরের একপর্যায়ে তারা অচেতন হয়ে পড়লে সেখানেই ফেলে রাখা হয়।
রাত ১১টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুজনকে উদ্ধার করে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানেই রুপলাল দাসকে মৃত ঘোষণা করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রদীপ দাসকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, তবে রবিবার ভোরে তিনিও মারা যান।
স্থানীয়দের ধারণা, বোতলগুলোতে চোলাই মদের মতো কিছু ছিল। নিহতদের স্বজনরাও একই দাবি করেন।
ঘটনার বিষয়ে তারাগঞ্জ থানার ওসি এম.এ.ফারুক বলেন, “গণপিটুনিতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত রুপলালের স্ত্রী মালতী রাণী দাস বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনা তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।”