বোদায় রাস্তার কাজে অনিয়ম অস্বীকার, এলজিইডি কর্মচারীকে গণপিটুনি
- পঞ্চগড় প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৮:১৫ পিএম, ০২ আগস্ট ২০২৫

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় চলমান একটি সড়ক উন্নয়নকাজের মান নিয়ে উত্তেজনার জেরে স্থানীয়দের রোষের শিকার হয়েছেন এলজিইডির এক কর্মকর্তা। রাস্তার অনিয়ম অস্বীকার করায় বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে গণপিটুনি দেয় বলে জানা গেছে।
শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের গাইঘাটা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই অঞ্চলে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের নির্মাণকাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে—এমন অভিযোগে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়।
দুপুরে ক্ষুব্ধ জনতা কাজ বন্ধ করে দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান বোদা উপজেলা এলজিইডির কার্য-সহকারী জাহিদুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করলে উত্তেজিত জনতা তাকে মারধর করে। পরে তিনি পাশের একটি ধানক্ষেতে আশ্রয় নিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন জানান, “এই রাস্তার কাজ দীর্ঘদিন ধরে চলছে। পাশের আরেকটি রাস্তায় কাজ শেষ হলেও এই রাস্তায় বারবার কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনিয়মের কারণে। এবারও স্থানীয়রা অভিযোগ করলে আমি নিজে গিয়ে দেখি, সত্যিই কাজের মান অত্যন্ত খারাপ। আমি স্থানীয়দের সহযোগিতায় কাজ বন্ধ করে দিই।”
স্থানীয় বাসিন্দা ইউসুফ আলী বলেন, “আমি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি সামান্য ব্যবহারে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। মিস্ত্রিরা তখন হাতুড়ি দিয়ে সেটা ঠিক করার চেষ্টা করেন।”
স্থানীয় যুবক মাসুদ রানা অভিযোগ করেন, “আমাদের বাড়ির পাশে এই রাস্তায় কাজ চলছিল। দেখি কাদা ও ধুলাবালির ওপরেই কার্পেটিং চলছে। প্রতিবাদ করলে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়।”
এদিকে প্রকল্পের কাজে অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক মিস্ত্রি আবুল কালাম। তিনি বলেন, “বৃষ্টির কারণে কিছু জায়গায় বালু ছিল, তবুও কার্পেটিং করা হয়েছে। রাস্তার ময়লা না সরিয়ে কাজ শুরু করায় কার্পেটিং উঠে গেছে।”
গণপিটুনির শিকার কার্য-সহকারী জাহিদুল ইসলাম ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, “অফিস থেকে আমাকে বলা হয় কাজ দেখতে যেতে। গিয়ে দেখি স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি সাংবাদিকদের বলি যে, অনিয়ম হয়নি। তখনই লোকজন উত্তেজিত হয়ে আমাকে মারধর করে। কোনোমতে পালিয়ে বাঁচি।”
তিনি আরও জানান, “১০ দিন আগে বিটুমিনাস প্রাইম কোট দেওয়া হয়েছিল। বৃষ্টির কারণে কিছু বালু পড়ে গিয়েছিল। পরিষ্কার না করেই কার্পেটিং করায় সমস্যা হয়েছে।”
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমআর ট্রেডার্সের প্রতিনিধি মিজানুর ইসলাম বলেন, “এটি ২০২০-২১ অর্থবছরের কাজ। আমি সাব-ঠিকাদার হিসেবে যুক্ত ছিলাম, বিস্তারিত এখন মনে নেই।”
জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ জামান জানান, “রাস্তার কাজের অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। তবে কেউ গণপিটুনির শিকার হয়েছেন, এমন খবর এখনো পাইনি।”