এক কেজি ইলিশ কিনতে লাগছে এক মণ চালের দাম!
- চাঁদপুর প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০১:০২ এম, ৩০ জুলাই ২০২৫

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার আমিরাবাদ একলাশপুর বাবুবাজারে ইলিশ এখন যেন সোনার চেয়েও দামী। নদীতে ইলিশের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় বাজারে সরবরাহ তলানিতে, আর যে অল্প সংখ্যক মাছ আড়তে আসছে, তার দাম ছুঁয়েছে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
স্থানীয় বাজার ঘুরে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দেখা যায়, এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২,৩০০ থেকে ২,৪০০ টাকায়। মাঝারি আকৃতির ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশের দামও কম নয় - প্রতি কেজি ১,২০০ থেকে ১,৩০০ টাকা। বিপরীতে, আড়তে বড় আকৃতির (৫ কেজির বেশি) পাঙ্গাস মাছ প্রতি কেজি ১,০০০ থেকে ১,১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
জেলে হোসেন আলী ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, প্রতিবার এ মৌসুমে আমরা ইলিশ কিনে খেতাম। কিন্তু এখন তো সেটা স্বপ্ন। একটা মাঝারি ইলিশ কিনতেই দুই হাজার টাকা লাগছে, ১ কেজি ইলিশের দাম দিয়ে ১ মণ চাল কেনা যায়। এখন ইলিশ ক্রয় করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব না।
নদীতে মাছের সংকটের কথা জানিয়ে স্থানীয় জেলে টিটু বর্মণ বলেন, নদীতে আগের মতো ইলিশ নেই। অনেক সময় সারারাত জাল ফেলে একটাও মাছ পাই না। নৌকা, তেল, বরফ সব খরচ নিজের ঘাড়ে, কিন্তু মাছ না থাকায় লোকসান দিতে হচ্ছে।
একই পরিস্থিতির কথা জানিয়ে জেলে আল আমিন বলেন, জীবন ঝুঁকি নিয়ে নদীতে নামি, কিন্তু জাল খালি উঠে। বর্ষায় মাছ পাওয়ার কথা, কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে পানিতেও মাছ নেই, জালেও নেই।
বাবুবাজারের মৎস্য আড়তদার দেলু বেপারী পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, নদীতে এখন মাছের সৃজনকাল। এ সময়ে মাছ কম ধরা পড়ে। সেই জন্য বাজারে ইলিশের সরবরাহও কম, তাই দাম বেশি। আমরাও চাই সস্তায় বিক্রি করতে, কিন্তু মাছ কম থাকলে আমরাও বেশি দামে কিনি।
আরেক আড়তদার সিরাজ মোল্লা বলেন, এখন নদীতে জেলেরা তেমন মাছ পাচ্ছে না। আবার যেটুকু পাচ্ছে তা পরিবহনে খরচ বাড়ায় দাম বাড়ছেই। এই সময়টা কষ্ট করে পার করতে হবে। আগস্টে হয়তো দাম কিছুটা কমবে।
বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বাবুবাজারের সরদার রাজিব খান বলেন, আমরা আশা করছি দুই এক সপ্তাহের মধ্যে যদি আবহাওয়া ভালো থাকে আর নদীতে মাছ ওঠে, তাহলে দামও কমে আসবে। তবে সরকারিভাবে কিছু উদ্যোগ থাকলে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেত।
দাম শুনে হতাশ হয়ে ফিরে যাওয়া ক্রেতা লিয়াকত হোসাইন রাফেদ বলেন, বাজারে এসেছিলাম ইলিশ কেনার জন্য। কিন্তু দাম শুনে মাথা ঘুরে গেছে। এত দামে ইলিশ কেনা সম্ভব না। তাই রুই, কাতলা কিনে চলে যাচ্ছি।
গৃহিণী সাবিনা ইয়াসমিন জানান, ইলিশ ছাড়া ঈদ বা উৎসব যেন পূর্ণ হয় না। কিন্তু এভাবে দাম বাড়লে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য ইলিশও যেন বিলাসিতা হয়ে দাঁড়ায়।
অন্যদিকে মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছুদিনের মধ্যে নদীতে মাছ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তখন বাজারে দাম কিছুটা স্বাভাবিক হবে। তবে ক্রেতাদের কষ্ট লাঘবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মৎস্য উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মতলব উত্তর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস কালবেলাকে বলেন, নদীর পানির মান খারাপ হওয়া, অপরিকল্পিত নিষেধাজ্ঞা এবং অবৈধ উপকরণের ব্যবহারের কারণে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি অবৈধ জাল ও চাঁই অপসারণে।
তিনি আরও বলেন, এখন বর্ষার সময়, এটি মাছের মৌসুম। আমরা আশাবাদী, কয়েক দিনের মধ্যেই মেঘনা নদীতে মাছের পরিমাণ বাড়বে। জেলেরা নতুন করে মাছ ধরতে পারবেন।