স্কুলের প্রধান শিক্ষক
‘বিবাহিত মেয়েরা স্কুলে পড়তে পারবে না’
- ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০১:৩৬ পিএম, ২৯ জুলাই ২০২৫

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার চাপাতলা গ্রামের রিনা আক্তার মনিরা সদ্য বিবাহিত এক কিশোরী, যার চোখে ছিল বড় হয়ে পুলিশ অফিসার হওয়ার স্বপ্ন। তবে পরিবারের আর্থিক সংকট ও বাবার হঠাৎ মৃত্যুর পর বাধ্য হয়েই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাকে। তবুও মনের মধ্যে শিক্ষিকা হওয়ার ইচ্ছেটা আঁকড়ে ধরে রেখেছে সে।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিরা আশা করেছিল, বিয়ের পরও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে। সেই উদ্দেশ্যে ২০ জুলাই তার মা আফরোজা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হয় স্বরূপপুর কুসুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু সেখানে গিয়ে সে চরম অপমানের শিকার হয়। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন “বিবাহিত মেয়েরা স্কুলে পড়তে পারবে না।”
মা-মেয়ে অনেক অনুরোধ করেও মনিরাকে শ্রেণিকক্ষে বসার অনুমতি পাননি। পরবর্তীতে তারা বিষয়টি লিখিতভাবে মহেশপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে অভিযোগ আকারে জানান। কিন্তু অভিযোগ করার পরও মনিরার বিদ্যালয়ে ফেরা সম্ভব হয়নি। এতে চরম মানসিক ভেঙে পড়েছে মনিরা।
মনিরা বলেছে, আমি লেখাপড়া করে শিক্ষক হতে চাই। বিয়ে হয়েছে মানে এই না যে, স্বপ্ন শেষ। আমি স্কুলে ফিরে যেতে চাই।
মনিরার মা আফরোজা খাতুন জানান, মেয়েটা লেখাপড়ায় মোটামুটি ভালো। তাই স্বামীর অনুমতি নিয়েই স্কুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানকার প্রধান শিক্ষক সাফ জানিয়ে দেন বিবাহিত মেয়েরা স্কুলে পড়তে পারবে না।
এই ঘটনায় এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে, কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এমন কোনো নির্দেশনা নেই যা বিবাহিত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় থেকে বঞ্চিত করার অনুমতি দেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান জানান, আমরা অভ্যন্তরীণ নীতিমালার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দিনেশ চন্দ্র পাল জানিয়েছেন, এমন অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন শিক্ষার্থীটিকে ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় আবারও প্রশ্ন উঠেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজের খেয়ালখুশিমতো সিদ্ধান্ত কার্যকরের বিষয়ে এবং ছাত্রছাত্রীদের মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়ার বিষয়ে। মনিরার মতো শিক্ষার্থীরা কবে পাবেন তাদের স্বপ্নপূরণের অধিকার সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে এলাকাবাসীর মনে।